কুষ্টিয়ায় বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নারী কেলেংকারী নিয়ে ঝড় উঠেছে। সালমা বেগম (৩৫) নামে এক নারী নিজের স্বামী ও সন্তানের পিতার দাবিতে গত তিনদিন ধরে বন কর্মকর্তার কার্যালয় ও বাসায় অবস্থান নেয়।
এসময় বন কর্মকর্তা আবু সালেহ মোঃ শোয়াইব খান ও তার সহকর্মীরা ঐ নারীকে দফায় দফায় মারপিট করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। এসময় নারীর সাথে ধস্তাধস্তি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া কার্যালয়ে বাসার রাস্তা অব্দি গড়ায়। সিনেমা স্টাইল এই দৃশ্য সাধারণ মানুষও দেখেছে। সাংবাদিক পৌঁছালে বন কর্মকর্তার সহকর্মীরা তাদের উপরেও চড়াও হয়। এক পর্যায়ে অসহায় ঐ নারী ক্যামেরার সামনে তার করুন অবস্থা তুলে ধরেন। সেই কাহিনীও সিনেমাকে হার মানায়। তিনি বলেন, প্রায় দশবছর আগে মোবাইলে রং নাম্বারে তার সাথে পরিচয়।
অল্প অল্প আলাপে জমে উঠে সম্পর্ক। এক পর্যায়ে তা প্রেমে রুপ নেয়। ডেটিংও করেন তারা। ভন্ড প্রেমিক বন কর্মকর্তা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেন সালমাকে। বিয়ের পর কক্সবাজার সুমুদ্র সৈকতে হানিমুনও হয়েছে তাদের। এরপর সালমার জেলা শহর টাঙ্গাইলের কাজী রোডে বাড়ি ভাড়া নেন তারা। সপ্তাহে, মাসে ও ছুটিতে সেখানে ছুটে যেতেন বন কর্মকর্তা। এভাবেই সালমার কোল জুড়ে আসে কন্যা সন্তান। তাদের ভালবাসার ফসল অথৈ এর বয়স এখন পাঁচ বছর। সবই চলছিল ঠিকঠাক নিয়মে। কিন্তু বণ কর্মকর্তার প্রণয়ের টান কমে আসে।
গত ৯ মাস ধরে সে সালমা বেগমের কোন খোঁজ খবর নেয় না। মাসিক খরচের টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দেন। সালমা ফোন দিলেও তিনি তা ধরেন না। অতিরিক্ত ফোন দিলে সে অন্য নারীকে দিয়ে রিসিভ করায়। সেই নারী নিজেকে বণ কর্মকর্তার স্ত্রী পরিচয় দেয়। এদিকে, বাসা ভাড়া, নিজেদের খাবার খরচ বকেয়া হয়ে ওঠে। পাওনাদাররা চাপাচাপি করলে সে চরম অসহায় হয়ে পড়ে। এর মধ্যে বাধ্য হয়ে সে শিশু মেয়েকে নিয়ে কুষ্টিয়ায় বন কর্মকর্তার কাছে আসে। তাকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করে। সালমা বেগম বিষয়টি নিয়ে বন কর্মকর্তার পরিচিতদের কাছে বিচার চান। কতিপয় ওই পরিচিতদের বুদ্ধিতে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এক পর্যায়ে ভয় ভীতি দেখিয়ে জোর করে সালমাকে কুষ্টিয়া থেকে গাড়িতে তুলে দেয়। সালমা আবারও বন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেস্টা করলে বার বার ব্যর্থ হয়। পরিস্থিতি নিয়ে চরম শংকিত হয়ে সালমা আবারও কুষ্টিয়া আসেন।
গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার পিটিআই রোডে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হন। তাকে দেখে বন কর্মকর্তা দৌড় দিয়ে অফিস থেকে বাইরে চলে যান। তার পেছনে দৌড়াতে থাকে সালমা। একপর্যায়ে বন কর্মকর্তা কার্যালয়ের পাশে একটি ছাত্রাবাসে আশ্রয় নেয়। সালমা সেখানে গেলে তাকে মারধর করেন বনকর্মকর্তা। সালমা তার অসহায়ত্বের কথা বলতে থাকেন, স্বামীর পরিচয়, বিশেষ করে নিজের সন্তানের পিতার পরিচয়ের দাবী তোলেন। এসময় তাকে মারধর করে বাইরে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চলে। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা চলে আসে। এসময় বন কর্মকর্তা নিজেই সেখান থেকে আবারও দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। সালমা তার পিছু নেয়। বনকর্মকর্তা নিজের কার্যালয়ে ঢুকে রুম বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে সালমা সেখানেও ঢুকে পড়েন, সেখানেই সে ক্যামেরার সামনে নিজের করুণ অবস্থার বর্ণনা করেন। এ সময় বনকর্মকর্তা আবু সালেহ মোঃ শোয়াইব খান সাংবাদিকদের বলেন, সালমার সাথে আমার পরিচয় আছে। বিভিন্ন সময়ে তাকে এবং তার পরিবারকে সহায়তা করি। বিয়ের কথা মিথ্যা। সম্প্রতি তাকে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা করি। সে আরও বড় অংকের সুবিধা নেওয়ার জন্য এসব করছে।
সারাদিন সে সেখানেই অবস্থান করে। রাতেও সে বন কর্মকর্তার বাসায় অবস্থান করেন বলে জানা গেছে। সারারাতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সালমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা হয়েছে। এসব কিছু মানেন নি সালমা। সে বলে নিজের জন্য নয়, মেয়ের জন্য অন্তত তিনি বাবার পরিচয় চান।
গতকাল সকাল থেকে বিষয়টি টক অব দা টাউনে পরিণত হয়। বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়াই। সমাজ সেবা অফিস’র লোকজন সালমাকে নিজেদের অফিসে নিয়ে যান। জানা গেছে, সেখানে যান বনকর্মকর্তাও। সমাধানের চেষ্টা হলে বাকবিতন্ডতা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সালমাকে থানায় নেন। মামলা করার পরামর্শ চেয়ে পরে পুলিশ পাহারায় সালমাকে পরিবহনে তুলে দেওয়া হয়। এর পর গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করলে শ্যামলী পরিবহনের লোকজন তাতে বাঁধা দেয়। বাইরে পুলিশও ছিল। সাদা কাগজে মুচলেকা লিখে চোখের জলে কুষ্টিয়া থেকে সালমা বেগমের বিদায়।
এর পর থেকে সালমার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় রাত ১১ টায়ও তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।
এবিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরানী ফেরদৌস দিশা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা জানতে পাই গত কয়েকদিন ধরে বন বিভাগের কার্যালয়ের সামনে এক নারী অবস্থান করছেন। আমি ওসিসহ জেলা মহিলা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যেয়ে দেখি মেয়েটি কান্নাকাটি করছে। আমরা তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তার মুখ থেকে শুনি ৯ বছর ধরে তাদের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক। তাদের ৫ বছরের একটি সন্তানও আছে। কাবিন চাইলে সে জানায়, কাবিন নেই। আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে বিয়ে করেছি। তখন আমি তাকে পরামর্শ দেই আপনি বাড়ি চলে যান। সেখানে যেয়ে আইনের আশ্রয় নিন। আপনার সন্তানের ডিএনএ টেস্ট করলেই তার পিতৃ পরিচয় মিলবে। আমরা টাঙ্গাইল জেলা মহিলা কর্মকর্তকে ফোনে বলেছি তাকে হেল্প করার জন্য। মহিলা আমাদের পরামর্শ গ্রহন করে স্বেচ্ছায় চলে যান। শ্যামলী পরিবহনে তাকে তুলে দেওয়া হয়। মুচলেকা লেখা হয়নি। আর সাদা কাগজে তো প্রশ্নই উঠেনা।
এ বিষয়ে শ্যামলী পরিবহনে বসে এ প্রতিবেদককে সালমা বেগম জানান, আইনী লড়াই করবো। উপরে মুচলেকা লেখা সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে মডেল থানার ওসি’র প্রতি আমি কৃতজ্ঞ তিনি আমাকে হত্যার হাত থেকে উদ্ধার করে নিজে বাসের টিকিট কিনে আমকে বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।