রোজার ঈদ সামনে রেখে শর্তসাপেক্ষে আগামী রবিবার থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে এবার আশার আলো দেখছেন পোশাক খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাই ঈদ বাজার ধরতে পোশাকের পাশাপাশি ঈদের আনুষঙ্গিক অন্যসব পণ্য বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বুধবার (৬ মে ) সকালে কুষ্টিয়া শহেরর এন,এস,রোড এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।
জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। এ ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপরে কয়েক ধাপে সরকারী ছুটি বাড়ানো হয়। আগামী ১৬ মে পর্যন্ত দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা থাকলেও সোমবার বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়ে ১০ মে থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশের শপিংমলগুলো খোলা রাখা যাবে জানিয়ে জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এতে বলা হয়, রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর সামনে রেখে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। এক্ষেত্রে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলতে হবে। দোকান খোলার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে সকল ধরনের ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে দোকান বন্ধ থাকায় পাইকারি বা খুচরা বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সরকারের সিদ্ধান্তে দোকান খুলতে পেরে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রচুর সংকটের মধ্যে আমাদের দিন যাচ্ছে। এই মুহূর্তে সরকার যে ঘোষণা দিয়েছেন এটি কিছুটা হলেও আমাদের সংকট কাটাতে সহায়তা করবে। তাই এই বন্ধের মধ্যেও আমরা দোকান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি। যাতে নির্ধারিত সময়ে সরকারের বিধি-নিষেধ মেনে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারি।
ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, সরকার যে ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। আমরা সেটি মেনে চলার চেষ্টা করবো। এজন্য আজ দোকানটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করলাম। একই সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রেখেছি। নিজে সুস্থ থাকবো অন্যকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করবো।
আর্থিক সংকটের মধ্যে আমাদের দিন কাটছে। জমানো কিছু টাকা ছিল সেটিও শেষ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে সরকারের দোকান খোলার ঘোষণা কিছুটা হলেও আমাদের দেনা থেকে মুক্ত করবে বলে জানালেন বড় বাজারের এক কাপড় ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, দোকান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে ধুলোর স্তূর জমে গেছে। তাই দোকান পরিষ্কার করছি। আগামী ১০ তারিখ থেকে দোকান চালু করবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার অধিকাংশ মার্কেট, বাজার ও শপিং মলের সামনে-পেছনে প্রশস্ত জায়গা কম। ফলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে যে পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন হবে সে পরিমাণ জায়গা কোনও মার্কেটেই নেই। অপরদিকে ঈদের সময় ক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি মানবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। ফলে সরকারের দেওয়া শর্ত শতভাগ মেনে মার্কেট, দোকান বা শপিং মল খোলার বিষয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেই কর্মচারীদের বেতন বোনাস দিতে হবে, ঈদের মাত্র ১৫ দিন বাকি থাকতে দোকান বা শপিং মল বা মার্কেট খুললে পর্যাপ্ত বেচাকেনা হবে কিনা, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। পর্যাপ্ত বেচাকেনা না হলে কর্মচারীর বেতন বোনাস পরিশোধ করবেন কী দিয়ে? ঈদের সময় ক্রেতার পছন্দসই মালামাল কোথায় পাবেন? কীভাবে আনবেন তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। ফলে ১০ মে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে কুষ্টিয়াতে জনসমাগম কমে গেছে, অনেকেই কুষ্টিয়া ছেড়ে গ্রামে গেছেন। যারাও আছেন তারা অনেকেই করোনার ভয়ে মার্কেটে আসবেন না। রাজধানীসহ সারা দেশে অনেকেই বেকার হয়েছেন। দীর্ঘদিন বেকার থাকায় জমানো পুঁজিও শেষ। ঈদের কেনাকাটা করবেন কী দিয়ে? ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রেতাসমাগমও হবে না, বেচাকেনাও হবে না। আর প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা না হলে মুনাফাও হবে না।
এক টেইলার্সের সত্বাধিকারী বলেন, কর্মচারী বেতনসহ দোকান ভাড়া জমে গেছে। এই মুহূর্তে সরকারের দোকান খোলার ঘোষণা ইতিবাচক। ঈদের বাকি যে কয়েকটি দিন আছে সেটিকে কাজে লাগিয়ে আমরা কিছুটা হলেও আর্থিক সংকট থেকে রক্ষা পাবো।
শহরের দোকান মালিক সমিতি জানিয়েছে, সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে আগামী ১০ মে থেকে দোকানপাট খোলা রাখবো আমরা। দোকান খোলার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আনন্দ ফিরে এসেছে। দোকান খোলা হলে সরকারের দেয়া সব শর্ত বা নির্দেশনা মেনেই দোকান খোলা রাখতে হবে। কোন ধরনের অনিয়ম করা যাবে না। সরকার যেমন দেশের সব জনগণের কথা চিন্তা করে, ক্রেতা বা আমাদের কথাও চিন্তা করেছে, ঠিক তেমনি আমাদেরও সরকারের নির্দেশনাও মেনে চলা উচিত।
তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকান-পাট ও শপিংমল খোলা রাখা হবে। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না তাদের দোকান খোলার প্রয়োজন নেই।
অপরদিকে গত ৪ মে সরকারের এক নির্দেশনায় বলা হয়, সারাদেশের দোকানপাট, শপিংমলগুলো আগামী ১০ মে থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। এরআগে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা ছিল। পরের নির্দেশনায় একঘণ্টা কমানো হয়েছে।
সেক্ষেত্রে প্রতিটি শপিংমলে প্রবেশের ক্ষেত্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘোষিত সতর্কতা প্রয়োগ করতে হবে।