Friday, March 29, 2024
প্রচ্ছদখুলনা বিভাগকুষ্টিয়াকুষ্টিয়ায় অটো মিল মালিকদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ার অভিযোগ, ধানের দাম বাড়াকে...

কুষ্টিয়ায় অটো মিল মালিকদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ার অভিযোগ, ধানের দাম বাড়াকে অজুহাত

Published on

মনিটরিং নেই খাজানগর মোকামে, নতুন ধান বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম বাড়বে

কুষ্টিয়া অটো মিল মালিকদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছে খুচরা আড়ৎদাররা। তবে ধানের দাম বাড়ার ফলে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিল মালিকরা। জেলায় প্রতিটি মিলে পর্যাপ্ত পরিমান ধান ও চাল মজুদ থাকার পরও চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোন কারন নেই বলে মনে করেন কৃষি বিভাগ ও ভোক্তারা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হঠাৎ করেই কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে মিল গেটে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ধানের দাম বেড়েছে এমন অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে মিল মালিকরা। দেশের অন্যতম বড় চালের মোকাম খাজানগরে এই মুহুর্তে সব চালের দাম উর্দ্ধমুখী।

এক সপ্তাহ আগে মিল গেটে মিনিকেট চাল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকায়। খুচরা বাজারে দাম আরো দুই থেকে তিন টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কাজললতা ও বিআর ২৮ জাতের চালের দাম ৩২ থেকে ৩৩ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৩৬ থেকে ৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এছাড়া মোটা চালের বাজারও ২ টাকা বেড়েছে আগের তুলনায়। নতুন ধান বাজারে আসার পর চালের দাম কমে যাবে দাবি করেন মিল মালিকরা। তবে সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করেন তারা।

সরেজমিন খাজানগর মোকামে গিয়ে কথা হয় মিল মালিকদের সাথে। একজন চাল ব্যবসায়ী বলেন, তিনি চাতাল লিজ নিয়ে চালের ব্যবসা করেন। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য চালের বাজার বাড়ছে।

তিনি বলেন, মিনিকেট অর্থাৎ সরু ধানের দাম ৯০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৫০ টাকা, ২৮ জাতের প্রতি মণে বেড়ে সাড়ে ৮০০ টাকা, মোটা নতুন জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ টাকায়। এছাড়া কাজললতাসহ অন্যান্য ধানের দামও প্রতি মনে ১০০ টাকা বেড়েছে বলে মিল মালিকরা দাবি করেছে।

চাঁদ আলী বলেন, আমরা ম্যানুয়াল মিলে ধান ছাটাই করে এই চাল অটো মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করি। বর্তমানে বিআর ২৮ ও কাজললতা চাল প্রতি কেজি অটো মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করছি ৩৩ টাকায়। তাদের বাছাই খরচ হচ্ছে কেজিতে দেড় থেকে ২ টাকা। এরপর এই চাল তারা আরো ২ টাকা লাভে ৩৭ টাকায় বিক্রি করছে। যা খুচরা বাজারে গিয়ে বেড়ে ৪০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।’

খাজানগরে বর্তমানে ৪৪টি অটো মিল ও হাসকিং মিল চালু রয়েছে ২ শতাধিক। তবে সব ব্যবসা অটো মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে।

একাধিক চালকল মালিক জানান, বিগত কয়েক মাস ধরে চাল কেনাবেচা কম ছিল। অটো মিল মালিকদের গোডাউনে প্রচুর চাল জমে যায়। তাই আমনে নতুন ধান ওঠার আগেই সিন্ডিকেট করে তারা কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়ে বিক্রি শুরু করে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ অন্যান্য আড়ৎ থেকে চালের অর্ডার দিলেও সংকট দেখিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে কম। যাতে বাজারে চালের টান থাকে এবং বেশি দামে বিক্রি করা যায়।

গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় খাজানগর থেকে। এখানে রশিদ এগ্রো ফুড দাম বাড়ালে অন্যরা বাড়িয়ে দেয়। চালের বড় একটি অংশ এই মোকাম থেকে যায় সারা দেশে। তাইতো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এখানকার গুটিকয়েক মিল মালিক। বিশেষ করে রশিদের মিলের চালের বেশি চাহিদা থাকে। এ মোকামে মিনিকেট চাল উৎপাদন হওয়ায় সারা দেশের আড়ৎদাররা এখান থেকে বেশি চাল নিয়ে থাকে। তবে মিল মালিকদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ’

কুষ্টিয়া রশিদের অটো মিলের মিনিকেট চাল সব থেকে ভালো মানের। তাই তার চালের দাম অন্যদের তুলনায় আরো ১ থেকে ২ টাকা বেশি বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশ থেকে প্রচুর চালের অর্ডার আসছে। অটো মিলগুলো ২৪ ঘন্টা চলছে। প্রতিদিন কুষ্টিয়া থেকেই শতাধিক ট্রাক চাল বাইরে পাঠানো হচ্ছে। তারপরও অর্ডার দিয়ে ঠিক মত চাল পাওয়া যাচ্ছে না বলে কুষ্টিয়া পৌর বাজারের অনেক ব্যবসায়ী এমন অভিযোগ করেছে।

চাউল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন,‘ মিল গেটে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। অটো মিল মালিকরা চাহিদা অনুযায়ী চাল দিচ্ছে না। তারা সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেয়ার ফন্দি করছে। প্রতি বছর একটা সময় তারা এ কাজ করে। বাজার মনিটরিং না থাকায় তারা সুযোগ নেই।

কয়েকজন মিল মালিক বলেন, নতুন ধান উঠতে সময় লাগবে। সেই সময় পর্যন্ত চালের বাজার বাড়তে পারে । প্রচুর ধান ও চাল মজুদ থাকারও বিষয়টিও জানান তারা।

তবে চালকল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা মফিজ উদ্দিন বলেন, মিল মালিকরা এখনো লোকসানে চাল বিক্রি করছে। যেই দামে ধান কিনতে হচ্ছে তাতে আরো বেশি দামে চাল বিক্রি করলে কিছুটা লাভ হতো। বর্তমানে চাল বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না।’

তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বাজারে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। কৃষকদের ঘরে এই মুহুর্তে ধান মজুদ নেই। ফড়িয়ারা বোরো মৌসুমের ধান মজুদ করে অনেক স্থানে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে কৃষকের কোন লাভ হচ্ছে না। নতুন ধানের বাজার কম। ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে ধান।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন,‘ সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানো হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাজার তদারকি করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে মোকামে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।’

সর্বশেষ

কুষ্টিয়ায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পর সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্তত সাতজন...

কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির মামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর)...

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে...

পাসপোর্ট সংশোধনে সরকারের নতুন নির্দেশনা

এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট...

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে, কলেজছাত্রীর মৃত্যুর পর যুবক আটক

কুষ্টিয়ায় একটি আবাসিক হোটেলে শয্যা বিশ্বাস (১৮) নামে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায়...

ব্রাজিলের পতাকা টাঙাতে গিয়ে কুষ্টিয়ার মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সুপারি গাছে ব্রাজিলের পতাকা টাঙাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মিঠু শেখ (১৪) নামে...

যশোর বোর্ডে পাসের হার ৯৫% | কুষ্টিয়ায় শীর্ষে জিলা স্কুল, জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪৩ জন

মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে এ বছর যশোর শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।...