গতকাল রবিবার ২৪ মার্চ পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৬টি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় এখানে শুধু পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি স্বল্পতা, কোথাওবা ভোটার শুন্যতা, আবার কোথাওবা কেন্দ্রে দখলের অভিযোগে প্রার্থীর ভোট বর্জন ছাড়াও প্রকাশ্যে সিলমারা সহ ভোট জালিয়াতির অভিযোগে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার প্রত্যাহারের ঘটনাও ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে ভোটার উপস্থিতি মোট ভোটারের ২০% ভাগেরও কম ছিলো।
জেলার ৬টি উপজেলায় ৫টি পৌরসভা ও ৬৬টি ইউনিয়নে ৫শ ৭২টি কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৮ জন ।
নির্বাচনে আওয়ামীলীগ, জাসদ, স্বতন্ত্র থেকে ১৬ জন চেয়ারম্যান ও ৬৯ জন পুরুষ-মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ মোট ৮৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। তবে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুকুজ্জামান জন ভোট বর্জন করেছে। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছিলেন। রোববার দুপুর ১২ টায় মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, অনেক কেন্দ্রে আমাদের এজেন্ট দিতে দেওয়া হয়নি। জোর করে নৌকায় ভোট দেওয়াসহ ভোট কারচুপি এবং সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার ফলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষনা দেন।
ভোটগননা শেষে ফলাফল ঘোষনা করা হয়। জেলার ৫ টি উপেজলাতেই নৌকার জয়জয়কার লক্ষ করা গেছে।
এরমধ্যে
দৌলতপুর উপজেলা-
চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এ্যাড.এজাজ আহমেদ(মামুন) নৌকা প্রতীক ৭৯৭১৮ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বুলবুল আহমেদ চৌধুরী আনারস প্রতিকে ভোট পেয়েছেন ৪৭৭৭১।
সাক্কীর হোসেন পুরুষ ভাইচ চেয়ারম্যান ও সোনালী খাতুন মহিলা ভাইচ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
ভেড়ামারা উপজেলা-
চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোঃ আক্তারুজ্জামান মিঠু নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩৬ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ মনোনীত প্রার্থী মোঃ আব্দুল আলীম স্বপন মশাল, ৩৫ হাজার ৫৯ ভোট পেয়েছেন। পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বুলবুল হাসান পিপলু পালকি প্রতিক নিয়ে বিজয়ী হয়েছে।
মিরপুর উপজেলা-
চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৭ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুকুজ্জামান জন আনারস প্রতীক নিয়ে ২৮ হাজার ৯৬৪ ভোট পেয়েছেন। পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কাশেম আলী জোয়ার্দ্দার তালা প্রতীক পেয়ে এবং মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে সাতারু মর্জিনা খাতুন হাঁস প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন।
সদর উপজেলা-
চেয়ারম্যান পদে কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হওযায় চেয়ারম্যান পদ বাদে পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান পদে আবু তৈয়ব বাদশা নির্বাচিত হয়েছেন। এবং মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ফুটবল প্রতীকের শাহানাজ পারভিন রেখা।
কুমারখালী উপজেলা-
চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মান্নান খান নৌকা প্রতীক ১ লাখ ১৪ হাজার ২৮৫ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন আনারস প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ৩০ হাজার ৪৪১।
খোকসা উপজেলা-
চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ¦ সদর উদ্দিন খান নৌকা প্রতীক নিয়ে ২৮ হাজার ৯৪৪ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আল-মাসুম মোর্শেদ এর আনারস প্রতিক পেয়েছে ২৮৭১৬ ভোট।
এ ব্যাপারে জেলা রিটানিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আজাদ জাহান জানান, কোন প্রকার সহিংস ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, ৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, ৬শ ১১ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৬৬৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ৭ হাজার ৩৩১ জন পোলিং অফিসার, ৯ হাজার ৮৪৪ জন পুলিশ, আনসার, ১৩ প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত ছিলো।
এদিকে নির্বাচনী বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন ও পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত।