ভারতীয় উদ্যোক্তাদের কথা বিবেচনা করে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয় দু’বছর আগে। এক বছরের মধ্যে জমি অধিগ্রহণও শেষ হয়। এ অঞ্চলকে শিল্পের উপযোগী করতে ভূমি উন্নয়নের প্রাথমিক কাজও চলছে। তবে প্রতিবেশী দেশটির বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বদলে যাওয়ায় প্রকল্প এগিয়ে নিতে এখন কিছুটা ‘ভাটা’ দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠান ভেড়ামারায় বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ইজেড বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষও (বেজা) ভাবছে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া না গেলে বিকল্প হিসেবে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে জমি দেওয়া হবে।
ভারতীয় উদ্যোক্তাদের নজর এখন চট্টগ্রামের মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে। তারা ভেড়ামারার এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইজেড) চেয়ে বিভিন্ন কারণে সেখানে বিনিয়োগে যেতে চায়। এর পাশাপাশি মোংলা ইজেডেও প্লট বরাদ্দ চেয়েছে। দেশটির উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি অঞ্চল দুটি পরিদর্শনও করেছে।
জানতে চাইলে এই ইজেডের ব্যবস্থাপক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ভারতের বিনিয়োগ কারীদের জন্য মূলত ভেড়ামারায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। ৪০০ একরের এ ইজেডের জন্য ৩১২ একর জমি পাওয়া গেছে। বাকি জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। তবে দেশটির উদ্যোক্তারা এখন বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরকে লক্ষ্য করে জমি দেখছেন। এমন অবস্থায় কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান না এলে এটিকে সাধারণ ইজেড ঘোষণা করে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পল্গট বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষে ভূমি উন্নয়নের কাজ দ্রুত শুরু হবে বলে জানান তিনি।
ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের পদ্মার তীরবর্তী গোলাপনগরে বেজা এ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এটি শুধু ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত থাকবে ধরে নিয়ে বেশ তড়িঘড়ি জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালে জমি অধিগ্রহণ শেষ করে স্থানীয় প্রশাসন। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালে বেজার কাছে জমি হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল মারুফ। তিনি জানান, এরই মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি দল ইজেড পরিদর্শনও করে। তবে ভারতের বিনিয়োগকারীরা এখানে আসতে না চাওয়ায় কাজটা কিছুটা পিছিয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রেলওয়ের পরিত্যক্ত জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা এ ইজেডে নানান সুবিধা রয়েছে। এখন শুধু বালু ভরাট করে অভ্যন্তরীণ সড়ক ও বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামোর কাজ করতে হবে। এ জন্য ভেড়ামারা রেলস্টেশন থেকে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার রেললাইন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কুষ্টিয়া চেম্বারের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, ভারত এ ইজেড থেকে সরে আসায় কাজ শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে। এখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। তাই এখন দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠান এখানে আসতে আগ্রহী।
চাষি রিপন উজ্জামান জানান, তার ৯ একর আবাদি জমি প্রকল্পের মধ্যে পড়েছে। জাতীয় স্বার্থে ইজেডটি হলে এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হবে, এ অঞ্চলের মানুষের বেকারত্ব দূর হবে। এ জন্য হতাশ হওয়ার বদলে খুশি তিনি। তাই তিনিসহ এলাকার সবাই চান এখানে দ্রুত শিল্প কারখানা গড়ে উঠুক।