বিশ্বজুড়ে করোনার থাবায় সব কিছু ধমকে গেছে। ধস নেমেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। আর সব ধরণের ব্যবসার গতি আজ নিচের দিকে যাচ্ছে।
এবার কুষ্টিয়ার ফুল ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত, দিন কাটছে চরম হতাশা আর দুঃস্বপ্নে। সারা বছর বাজারে ফুলের কাটতির পাশাপাশি প্রতিবছর এ জেলার ফুল ব্যবসায়ীরা বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস এবং বাংলা নববর্ষ উদযাপন সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে ফুলের যোগান দিয়ে থাকে। এ সময়ে ভালো লাভ পান ব্যবসায়ীরা। এবছর স্বাধীনতা দিবসের আগে থেকে ফুল বেচাকেনা বন্ধ। বাংলা নববর্ষেও ফুল বেচাকেনা নেই।
যেকোন উৎসব, অনুষ্ঠান মানেই ফুলের প্রয়োজন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সকল ধরনের উৎসব ও অনুষ্ঠান বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকায় বিক্রি করতে না পেরে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়ার ফুল ব্যবসায়ী ও কারিগররা। সারা বছরে কয়েকটি অনুষ্ঠানকে ঘিরে এসব ব্যাবসায়ীরা ফুল বিক্রি করে থাকে। সেই সমস্ত অনুষ্ঠান না হওয়ায় বিক্রিও ছিল না। কুষ্টিয়ায় ফুলের খুচরা ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় অর্ধশত মানুষ এবং এবং তাদের পরিবার জড়িত রয়েছে। এ অবস্থায় তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
কুষ্টিয়ার বক চত্বরের ফুল ব্যবসায়ী ও নীলা ফুল ঘরের মালিক সুজন ইসলাম জানান, করোনার প্রভাবটা আমাদের উপর একটু বেশিই পরেছে। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফুল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। প্রতিটি ফুলের দোকানে ৪-৫ জন করে ফুলের কারিগর রয়েছে, সবাই অনেক লোকসানের মধ্যে রয়েছে।
একই স্থানের অন্য ফুল ব্যাবসায়ী ফুল সেন্টারের মালিক মোঃ সোনা জানান, দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফুল ব্যাবসায়ী ও কারিগরদের দুর্দিন চলছে, সামনের দিনগুলোতে কী হবে, সেই অনিশ্চয়তা নিয়ে এখন দিন কাটছে আমাদের।
বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার মিলিয়ে বাংলাদেশি ফুলের বার্ষিক বাণিজ্য রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার। এর মধ্যে দেশের ভেতরেই প্রতিবছর বিক্রি হয় প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার ফুল, যা প্রতিবছরই বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ফুলের উৎপাদন প্রায় ৭০ হাজার মে. টন। অন্যদিকে বর্তমানে সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। শুধু খুলনা বিভাগেই প্রায় ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। বর্তমানে যশোর, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গাসহ ২৪টি জেলায় ১০ সহস্রাধিক হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। যার প্রায় ৭০ ভাগ ফুল উৎপাদন হয় ফুলরাজ্য হিসেবে চিহ্নিত যশোর জেলার গদখালি এলাকায়।