কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ার ৫০হাজার খামারী প্রস্তুত করেছিলেন প্রায় ১লাখ গরু। ছোট বড় মিলিয়ে এসব খামারীরা সম্পুর্ন দেশীয় খাবার খাইয়ে প্রস্তুত করেছিলেন এসব পশু। প্রত্যাশা ছিল এবার ভালো মুনাফা পাবেন তারা। সেই লক্ষে ঈদের আগ মুহুর্তে বাজারে তুলেছিলেন তাদের কষ্টের পশু। কিন্তু কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাদের। অধিকাংশ খামারী পশু ফেরত আনলেও যারা বিক্রি করেছেন মোটা অংকের লোকসানে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝালুপাড়া গ্রামের আরিফুল ইসলাম একটি বেসরকারী এনজিও, ব্যাংক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কিনেছিলেন ৩টি গরু। খাবার খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে কোরবানীর উপযোগী করে তুলতে তার খরচ পড়েছিলো ৯লাখ টাকা। কোরবানীর ঈদের ৩দিন আগে একটি পিকআপ ভাড়া করে গাবতলীর পশুর হাটে নিয়েছিলেন গরু। ৩টি গরুর সর্বসাকুল্যে দাম ওঠে ৫লাখ টাকা। এই দরে গরু বিক্রি করলে তার লোকসান হবে ৪লাখ টাকা। ঈদের দিন পর্যন্ত হাটে থেকে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে ফিরেছেন বাড়িতে। ঈদের নামাজ পড়তে পারেননি তিনি। বাড়িতে এসে পৌছান ঈদের দিন সন্ধ্যায়। একান্নবর্তি পরিবারের অভিভাবক তিনি। তাঁর অনুপস্থিতিতে ঈদের আনন্দই ফিকে হয়ে যায় পরিবারের। তার প্রত্যাশা ছিল গরু তিনটির দাম অন্তত ১২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। বিক্রির অর্থ দিয়ে বউ ছেলে মেয়েদের পোশাক আশাক কিনে ফিরব বাড়িতে। কিন্তু তা আর হলো কই। কান্নাজড়িত কন্ঠে এভাবেই গরু বিক্রি না হওয়া হতাশার কথা বলেন তিনি। গরু বিক্রি না হওয়ায় ঋণ পরিশোধ নিয়ে বড্ড দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
একই উপজেলার চেঁচুয়া গ্রামের আব্দুল আলিম। কোরবানী উপলক্ষে প্রথমবারের মত খামার করেন। ১৪ লাখ টাকা দিয়ে ১২টি গরু কিনেছিলেন সঞ্চয়কৃত টাকায়। পুরো এক বছর পরিচর্যা করে গাবতলী হাটে রওনা হন ১৬ আগস্ট। প্রত্যাশা ছিলো ১২টি গরু অন্তত ২০ লাখ টাকা দাম হবে। কিন্তু ৯লাখ টাকার ওপরে দাম ওঠেনা। ভালো দামের আশায় ঈদের পরদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাকে। কিন্তু গরু বিক্রি না হওয়ায় হতাশ হয়েই ফিরতে হয় তাকে। আরিফুলের মত আলিমের পরিবারেরও ঈদ আনন্দ ফিকে হয়ে যায়। শুধু আরিফুল কিংবা আলিমই নয়। তাদের মত প্রায় ২০হাজার খামারী এভাবেই হতাশ হয়ে ফিরেছেন।
হঠাৎ গরুর বাজার পড়ে যাওয়ার কারন হিসেবে খামারীরা জানিয়েছেন প্রথমদিকে গরুর বাজার চড়া ছিলো। ভালো দাম পাবার আশায় খামারীরা ঝুকেছেন হাটে। কিন্তু শেষ মুহুর্তে ক্রেতারা দাম বেশি হবার কারনে আগ্রহ হারিয়েছেন। তাছাড়া যাদের একটি গরু একাই কোরবানী দেয়ার সামর্থ ছিলো তারা যৌথভাবে কোরবানী দিয়েছেন। এসব কারনে গরু বেচাকেনা কম হয়েছে।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আলমগীর হোসেন জানান এবার গরুর খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আগামীতে তারা আগ্রহ হারাবেন। এতে খামারী সংখ্যা কমে যেতে পারে আশংকাজনকহারে। এর ফলে আগামীতে কোরবানীর পশুর দামও ভালো পাওয়া যাবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো সিদ্দিকুর রহমান এবার খামারীরা কিছুটা লোকসানের সম্মুখীন হলেও তাতে খামারীদের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বেনা।