কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কিন্ডারগার্টেন বা প্রাইভেট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা করোনা সংকটের মধ্যে পায়নি কোনো সহায়তা। এতে প্রায় ২ হাজার শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করছে।
কিন্ডারগার্টেন সমিতির নেতারা জানান, দেশের অন্যতম প্রধান খাত শিক্ষা। এ খাতের এক বিরাট অংশ চলে বেসরকারি শিক্ষকদের দ্বারা। দৌলতপুরে কিন্ডারগার্টেন বা প্রাইভেট বিদ্যালয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো ১২৭টি ছোট বড় প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ হাজার শিক্ষক।
এ বিষয়টি উপজেলা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ এলাকার সচেতন মহলের অজানা নয়। অন্যান্য খাত কোভিড-১৯ বা লকডাউনেও সীমিত আকারে খোলা থাকলেও শুধু এই শিক্ষা খাতকেই পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টানা প্রায় ৩ মাসের লকডাউনের প্রভাবে জাতি গড়ার এই কারিগররা মানবেতর জীবনযাপন করছে যা তথাকথিত সুশীল সমাজ ও সরকারের নজর কাড়তে ব্যর্থ হয়েছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, এলাকার নেতারাও নানা উন্নয়ন কাজে ব্যস্ত থাকার ফলে প্রাইভেট স্কুল বা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের কান্না কারো দেখার সময় হয়নি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারি-বেসরকারি সাহায্য যাচ্ছে, অথচ দেশের নাগরিক হয়েও, জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের উচ্চ মহলের চোখে পরছেনা তাদের মানবেতর জীবন যাপনের দৃশ্য।
কিন্ডারগার্টেন সমিতির নেতারা আরও জানান, সবাই জানে শিক্ষিত বেকার কিন্ডারগার্টেন বা প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষকদের ইনকাম সোর্স কী। একজন প্রাইভেট শিক্ষক মাসে দুই হাজার থেকে আট হাজার টাকা বেতন পেতেন। ২/৪ টা টিউশনি করে কোনোরকম জীবনযাপন করতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান ক্ষুধার জ্বালা মৃত্যুর চেয়ে কঠিন সেটা করোনা জানিয়ে দিয়েছে। নিজের ঘরে যা ছিল অল্প দু’এক সপ্তাহ চলেছে, তারপর দোকানে বাকিতে এক মাস। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হাত পাততে হয়েছে, তাতে টেনেটুনে এক মাস চলেছে। পরে কোন আত্বীয় ফোন ধরেনা, কারণ তারা জানে টাকা ধার চাইবে! সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে গোপনে অন্য পেশা ধরতে হয়েছে।
নেতাদের দাবি, লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু চলতে পারে, কিন্তু দু’একজন শিক্ষক জীবন বাঁচানোর তাগিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাইভেট পড়ালে তার জন্য জরিমানা! আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তারাতো উচ্চ শিক্ষিত মানুষ, এই প্রাইভেট পড়ানোর পেছনে রয়েছে ক্ষুধা, দারিদ্র, অভাব, স্ত্রী-সন্তানের ঔষধ ও জীবন বাঁচানোর আর্তনাদের গল্প।
নেতা ও সাধারণ শিক্ষকদের দাবি, স্কুল ছুটি কালীন সময় প্রতি মাসে অন্তত ৩০ কেজি চাউলের ব্যবস্থা করতে হবে। চাউলটা হলে বাড়ির পাশে বিনা পয়সার কচুর শাক দিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে জীবন বাঁচাতে পারবে, তা না হলে করোনাভাইরাস প্রয়োজন হবেনা, খাওয়ার অভাবে অপুষ্টিতেই সকলকে মরতে হবে।