সম্প্রতি কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে কুষ্টিয়ার এক বিএনপি নেতার পরিবারের সদস্যদের ভাইটাল পদে নিয়ে আসা হয়েছে। দলীয় কোন কর্মকান্ডে কোন দিন যাদের অংশ নেই বাদ যায়নি ওই পরিবারের এমন প্রবাসী সদস্যারাও। এদিকে জেলার নির্যাতিত ত্যাগী নেতা কর্মিদের বাদ রেখে জেলা বিএনপি’র কমিটি পরিবার তান্ত্রিকভাবে গঠন করায় ক্ষোভ ফুসছে ত্যাগী নেতা কর্মিরা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা দেখছেন ভাংনের সুর।
সূত্র জানায়, গত ৭ মে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত প্যাডে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। এই কমিটিতে জায়গা পাইনি বিএনপি’র অনেক ত্যাগী নেতারা।
এদিকে জেলা বিএনপি’র সভাপতি কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী প্রভাব খাটিয়ে তার স্ত্রীকে নবগঠিত কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও তার ছেলেকে নির্বাহী সদস্য করিয়েছেন। জায়গা হয়নি জেলা যুবদলের সভাপতি আল-আমিন খান কানাই ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ জাকারিয়া উৎপলসহ অনেকের। এদের বিরুদ্ধে প্রায় ডজনখানেক করে রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। এদিকে তেমন কোনো প্রোগ্রামে দেখা মেলে না সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীর সহধর্মিনী সৈয়দা ফাহিমা রুমী ও ছেলে সৈয়দ ফাহিম আহমেদ রুমীকে এমনটি অভিযোগ নেতাকর্মীদের।
কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের সভাপতি আল-আমিন কানাইয়ের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই কমিটি কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র কমিটি না এটি কমিটি জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী’র নির্বাচনী এলাকা খোকসা কুমারখালী কমিটি। আমরা কোনদিনই দেখিনি সৈয়দা ফাহিমা আহমেদ রুমী কেন্দ্র ঘোষিত কোন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। তিনি হয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। তার ছেলে সৈয়দ ফাহিম আহমেদ রুমী কোনোদিনই দল করেনি। তিনি লন্ডন প্রবাসী। তবে কিভাবে তাকে জেলা বিএনপি’র ৮৯ নাম্বার সদস্য করা হলো?
তিনি আরো জানান, আমার বিরুদ্ধে হাফ ডজন রাজনৈতিক মামলা। গত জেলা কমিটি’র ক্রীড়া সম্পাদক ছিলাম আমি। আর সেই আমি কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র কমিটির কোথাও জায়গা পাইনি। শুধু আমি না আরো অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরা এই কমিটিতে জায়গা পাইনি। জায়গা না পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারকে মনোনয়ন দেন। তাই আমরা জনাব তারেক রহমানের উপর শ্রদ্ধা দেখিয়ে জাকির সরকার এর নির্বাচন করাই আমাদেরকে এই কমিটি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সবাই তাদের প্রতিহিংসার শিকার।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র সদস্য কুমকুম রহমান জানান, ২৫ বছর ধরে বিএনপি করে আসছে। কিন্তু কোন প্রোগ্রামে আমরা সৈয়দা ফাহিমা রুমি’র অংশগ্রহণ দেখি নি। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় নেতা আসা ছাড়া। এই কমিটিতে জায়গা পাইনি সদর উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি সাবিনা সুলতানা শিল্পী। যেখানে মহিলাদের ভোটে সরকার পরিবর্তন হয় সেখানে মহিলা নেত্রীদের মূল্যায়ন করা হয়নি।
এদিকে একটি সূত্রে জানা যায়, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ এ দুটি পদ সহ অসংখ্য পদ টাকার বিনিময়ে বিক্রয় হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় চাপে সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা কে দিতে বাধ্য হয়েছে সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। সিনিয়র সহ-সভাপতি ৩০ হাজার টাকায় বিক্রয় হওয়ার পরে পদ না পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
এমন অভিযোগের বিষয়ে সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী’র মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কিছু নেতাদের অভিযোগ থাকবেই। আমার ছেলে কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হবে।
এদিকে এই কমিটি পরিবার তান্ত্রিক কমিটি হওয়ায় অনেকেই বিএনপি’র দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গত ২২ শে জুলাই ২০১৮ তারিখে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষারের করা একটি মানহানির মামলায় কুষ্টিয়া আদালত থেকে জামিন নিতে আসেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান লাঞ্ছিত হয়। সেই সময় সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী’র ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।