Friday, March 29, 2024
প্রচ্ছদকুষ্টিয়াঅপরাধকুষ্টিয়ায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে মারা গেলেন কলেজ ছাত্র, ময়নাতদন্ত ছাড়াই তরিঘরি...

কুষ্টিয়ায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে মারা গেলেন কলেজ ছাত্র, ময়নাতদন্ত ছাড়াই তরিঘরি করে দাফন

Published on

কুষ্টিয়ার মিরপুরে ‘সমর্পণ’ মাদকাসক্তি মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে এক মানসিক ভারসাম্যহীন কলেজছাত্রকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

‘সমর্পণ’ নামের ঐ বে-সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে থেকে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও ময়নাতদন্ত ছাড়াই তরিঘরি করে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।

নিহত ওই কলেজ ছাত্রের নাম কামরুজ্জামান ইমন। নিহত ইমন উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের কাদেরপুর গ্রামের এজাজুল আজিম রিপনের ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল।

২০ নভেম্বর ওই কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ইমনকে মিরপুর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে একাধিক সূত্রে জানা যায় নিহত ইমনের বাবা সমর্পণ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মালিক আব্দুল মতিনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এই মৃত্যুকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।

মঙ্গলবার সকালে সিসি টিভির ফুটেজে কলেজছাত্র হত্যার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। তবে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের দাবি ওই কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে।

এমন দাবি করা হলেও সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে ওই ছাত্রকে পিটিয়ে ও ইনজেকশন পুষ করে হত্যা করা হচ্ছে।

গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে কলেজছাত্র ইমন আলীকে ভর্তি করা হয় মিরপুর বিজিবি সেক্টর এলাকার সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। মানসিক সমস্যার কারণে ভর্তি শেষে পরিবারের সদস্যরা ফিরে যান বাড়িতে।

পরদিন ২০ নভেম্বর সকালে ইমনের পরিবারকে জানানো হয় ইমনকে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে ইমনের বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন গিয়ে দেখতে পান তাদের ইমন আর বেঁচে নেই। ইমনের শরীরে বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে।

তবে ইমনের মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয়, তাকে নির্যাতন করেই মেরে ফেলা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে।

ক্যামেরায় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন ইমনকে হাত-পা বেঁধে মারধর করছে, শরীরে পুষ করা হচ্ছে ইনজেকশনও।

নিহত ইমনের পিতা এজাজুল আজিম রিপন বলেন, কোনো নেশার সঙ্গে জড়িত ছিল না ইমন। তবে সে বিভিন্ন সময় বাড়িতে ঝামেলা করত। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। এ কথা বলেছিল ডাক্তার। তাই মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

চিকিৎসকরা বলে ছিলেন, কয়েকদিন পর আসেন ভর্তি করে নেয়া যাবে। বাড়িতে ফিরে এসে ইমন খুব ঝামেলা সৃষ্টি করে। ওইদিন সবাই আমাকে কোথাও রেখে আসতে বলেন, তখন আমি কোনো কিছু না ভেবেই পৌরসভার যোগীপুল মহল্লায় অবস্থিত ‘সমর্পণ’ নামের একটি বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে দিয়ে আসি। ছেলেকে সুস্থ করার জন্য।

তারপর ২০ নভেম্বর বুধবার সকালে শুনছি আমার ইমন মারা গেছে। মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে না রেখে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে কেন রাখলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কেঁদে ফেলে বলেন, কি থেকে কি হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না।

অভিযুক্ত মাদক নিরাময় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করবেন কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, না আমার কোনো অভিযোগ নেই। যা হয়েছে সবই আমার কপালে লেখা ছিল।

তবে ইমনের মা কামরুন্নাহারের অভিযোগ, ইমনকে সুস্থ অবস্থায় ওখানে রেখে আসা হয়েছিল। পরে তাকে নির্যাতন করেই হত্যা করা হয়।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ও ইমনের কয়েকজন বন্ধু জানান, কোনো নেশার সঙ্গে জড়িত ছিল না ইমন। আমরা কখনই নেশা করতে দেখিনি। মৃত্যুর প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল ইমন। প্রথম দিকে না বুঝলেও কয়েকদিন পর বিষয়টি বুঝতে পারে ইমনের পরিবার। তারপর ইমনের বাবা ইমনকে ডাক্তারও দেখিয়ে ছিলেন। ডাক্তার বলে ছিলেন, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ঘুম কম হওয়ায় এমন সমস্যা হয়েছে। কয়েকদিন বিশ্রাম করলেই সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।

মৃত্যুর পর ইমনের শরীরে বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের দাগ দেখা গেলে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করা হয়নি নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে। ছেলের রহস্যজনক মৃত্যুর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও থানায় করা হয়নি কোনো অভিযোগ।

যে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ইমনকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে সেখানে গিয়ে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া না গেলেও ঘটনার সময় ওই নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত রুবেল নামে ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, উশৃঙ্খলতা ঠেকাতে হাত বেঁধে চড়-থাপ্পড় মারা হয় ইমনকে।

সমর্পণ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক হাবিব উদ্দিন জানান, নির্যাতনে নয়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায় ইমন।

মিরপুর ‘সমর্পণ’ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মালিক আব্দুল মতিন বলেন, এটা একটি দুর্ঘটনা মাত্র।

এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি মিরপুর থানার ওসি আবুল কালাম।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি (তদন্ত) এম জাবিদ হাসান বলেন, আমরা নিহতের পরিবারকে থানায় অভিযোগ করার কথা বলব।

মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন ফারাজি বলেন, ইমনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল কিন্তু কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

সর্বশেষ

কুষ্টিয়ায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পর সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্তত সাতজন...

কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির মামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর)...

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে...

পাসপোর্ট সংশোধনে সরকারের নতুন নির্দেশনা

এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট...

আরও পড়ুন

টিউশনি করে গোল্ডেন এ প্লাস পেলেন কুষ্টিয়ার জমজ দুই বোন

সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগী। টিউশনি করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছেন...

কুষ্টিয়ায় ফিটকারী, রঙ, সোডা, হাইড্রোজ দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড় | ব্যবস্থাপকের কারাদণ্ড

কুষ্টিয়ার খোকসায় আখেঁর গুড়ের সঙ্গে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক ফিটকারী, রঙ, সোডা, হাইড্রোজ ও...

ভারতীয় সিরিয়াল ‘সিআইডি’ দেখে কুষ্টিয়ার ফুল ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব হত্যার পরিকল্পনা

কুষ্টিয়ার মিরপুরে ফুল ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব (৫৪) হত্যার পর দ্রুততার সাথে রহস্য উদঘাটন করেছে...