কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর ও বিত্তিপাড়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতাল নামের দুটি বেসরকারি হাসপাতাল। ওই হাসপাতাল দুইটিতে কোন ডাক্তার নেই। শুধুমাত্র একজন আয়া দিয়ে দুটি হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
সরজমিন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া ও হরিনারায়ণপুর বাজারে স্থাপিত হাসপাতাল দুটিতে গিয়ে দেখা যায় যে সেখানে একাধিক রোগী ভর্তি নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন একজন মাত্র আয়া। তাও আবার খণ্ডকালীন। কারণ সাবিনা নামের এক আয়াকে একই সাথে দুটি হাসপাতালের রোগীদের দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন ওই হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর আলম।
সেখানে গিয়ে চিকিৎসাধীনরোগী ও ইতিপূর্বে যারা চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন তারা আবারও সেখানে চিকিৎসা নিতে আশায় তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই হাসপাতাল দুটিতে অপারেশন, এমআরআই, সনোগ্রাফিসহ বড় বড় শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু রোগ নির্ণয়ের জন্য বা অপারেশনের জন্য যে সব উপকরণের প্রয়োজন তার কোনোটিই নেই ওই হাসপাতাল দুটিতে। হাসপাতাল মালিক জাহাঙ্গীর আলম সনোলজিস্ট না হয়েও করছেন আলটা সনো। আবার ঠিক তেমনই ডাক্তার না হয়েও আয়া সাবিনা চিকিৎসা প্রদান করছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের।
ইতিপূর্বে ওই হাসপাতালে ভুয়া চিকিৎসা নিয়ে একাধিক জন মারা যাওয়া সহ পঙ্গুত্ব বরণ করার অভিযোগের ভিত্তিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, অদৃশ্য নেপথ্য শক্তির ক্ষমতায় ক্ষমতাবান হয়ে জাহাঙ্গীর আলম এই ক্লিনিক দুটি স্থাপন করেছেন। সেখানে ভুল বা ভূয়া চিকিৎসা দেয়া হলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কোন টু শব্দটিও করতে পারে না। ইতিপূর্বে এই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সে সময় ওই হাসপাতালে কর্মরত এক মহিলা চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।
সন্ধান নিয়ে ওই মহিলার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হাসপাতাল দুটিতে শুধু অপচিকিৎসা ও অর্থ হাতিয়ে নেয়া ছাড়া ছাড়াও নানা অসামাজিক কার্যক্রম চলতে থাকায় তিনি সেখান থেকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মহিলা জানান, বহু অপকর্মের হোতা এই জাহাঙ্গীর আলম। সুচতুর জাহাঙ্গীর আলম নিজ এলাকা কুষ্টিয়া কুমারখালী বাদ দিয়ে সদর উপজেলায় এসে দুটি স্থানে মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতাল স্থাপন করে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এই কারণেই যে কুমারখালীর লক জানলেও কুষ্টিয়ার কেউ জানেনা জাহাঙ্গীর আদৌ ডাক্তার নন।
ইতিপূর্বে নিজেকে ডাক্তার দাবি করে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে সিল স্বাক্ষর ব্যবহার করায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। তবুও তিনি কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়েই সব ধরনের রোগের রোগীর চিকিৎসা করে যাচ্ছে। তার প্রতিষ্ঠিত ওই দুটি বেসরকারি হাসপাতালে অপ চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।