বর্ষা মৌসুম শুরুতেই এবার পদ্মার নদীর পাড় ভাঙ্গতে শুরু করেছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি এলাকায় পদ্মার অব্যাহত ভাঙ্গনে হুমকিতে পড়েছে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য শিলাইদহের কুঠিবাড়ীসহ ৬ টি গ্রাম। এরআগে নদী ভাঙ্গনরোধে দুই’শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলেও এখনো দেড় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় কুঠিবাড়ীসহ ছয়টি গ্রাম পড়েছে ভাঙন ঝুঁকিতে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষার শুরুতেই প্রমত্তা পদ্মার পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ ভাঙ্গছে নদীর পাড়। এর আগে নদী ভাঙ্গন প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে চার কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলেও এখনো দেড় কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি গ্রাম থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী তীর অব্যাহতভাবে ভাঙ্গছে। নদী তীরবর্তী কোমরকান্দি গ্রামের জালাল সর্দারের বাড়ি থেকে জলিল প্রামাণিকের বাড়ি পর্যন্ত বাঁধ ধ্বসে পড়ছে।
এদিকে নদী ভাঙ্গনে বসত-বাড়িসহ ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় কুমারখালীর কোমরকান্দিসহ পাশাপাশি ৫/৬টি গ্রামের মানুষের দিন কাটছে। এছাড়া এখনো দেড় কিলোমিটার জুড়ে নদী তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় রবীন্দ্র কুঠিবাড়িও রয়েছে ভাঙ্গন ঝুঁকিতে। ভাঙ্গন ঝুঁকি থেকে কুঠিবাড়ি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের যেন নেই কোন উদ্যোগ ও তৎপরতা।
কোমরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ জানান, পদ্মা নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি কয়েকবার স্থানান্তর করেছি। এবারের ভাঙন নিয়েও এলাকাবাসী রয়েছেন শঙ্কায়। ভাঙনরোধে জলদি নদী তীর সংরক্ষণসহ প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী করেন তিনি।
শিলাইদহ ইউপি চেয়ারম্যান মো: সালাহ্উদ্দিন তারেক জানান, নদী ভাঙনরোধে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে শিলাইদহের ৫/৬টি গ্রামের বসতবাড়িসহ ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঐতিহ্যমন্ডিত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীও ঝুঁকিতে পড়বে বলে তিনি জানান। এদিকে ভাঙ্গনরোধে দুই’শ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মার তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ নির্মাণ করা হলেও কোমরকান্দি গ্রাম দেড় কিলোমিটার অংশে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খান জানান, ভাঙ্গন প্রবণ নদী তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনরোধে উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুন্ডু শিলাইদহের কোমরকান্দি এলাকার নদী তীর ভাঙ্গনের সত্যতা স্বীকার করে জানান, বর্ষায় প্রতি বছরই নদী তীর ভাঙ্গছে। এবার আগাম ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। তবে ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।