কুষ্টিয়ায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। যেখানে গত এক মাসের বেশি সময়ে জেলায় কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হয় মাত্র ২৩ জন, সেখানে তিন দিনের ব্যবধানে রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ জনে। গত তিন দিনে রোগী সনাক্ত হয়েছে ২২ জন।
শুক্রবার জেলায় এক দিনে ১০ জন রোগী সনাক্ত হয়েছে। যা এ যাবৎকালের মধ্যে একদিনে সব থেকে বেশি।
এরমধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। পুলিশ সদস্যের করোনা সনাক্ত হওয়ায় মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ পুলিশ ফাঁড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত সব সদস্যকে পুলিশ লাইনে এনে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ মে) রাত ৮টায় কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ পুলিশ ফাঁড়ির এক পুলিশ সদস্যের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসায় পুলিশ ফাঁড়ি লকডাউন করা হয়।
কাকিলাদহ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (এসআই) আতিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, করোনা আক্রান্ত ওই পুলিশ সদস্যের বাড়ি ঝিনাইদহে। তিনি আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। তিনি জেলার বাইরে যাননি। ওই পুলিশ সদস্য স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন।
মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, ২৬ মে করোনার উপসর্গ নিয়ে ওই পুলিশ সদস্য মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। যেহেতু করোনার উপসর্গ রয়েছে তাই আমরা তার নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করি। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তিনি বর্তমানে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
মিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, যেহেতু ওই পুলিশ সদস্য স্থানীয়ভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন; তাই পুরো পুলিশ ফাঁড়ি লকডাউন করে দিয়েছি।
ঈদের পর করোনা পজিটিভ রোগী বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় চিকিৎসকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, ঈদে বাড়িতে আসা মানুষেরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তাদের মাধ্যমে আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২২ এপ্রিল জেলায় প্রথম করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি সরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মাদারীপুরে কর্মরত ছিলেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনি কুষ্টিয়ায় এলে তাঁর নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ২৪ মে পর্যন্ত জেলার ছয়টি উপজেলায় ৩৫ জনের করোনো পজিটিভ পাওয়া যায়। ঈদের পর গত বুধবার ৪ জন, বৃহস্পতিবার ৮ জন ও আজ শুক্রবার ১০ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়। প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ৩৪ দিনে শনাক্ত হয়েছেন ৩৫ জন। গত তিন দিনে হয়েছেন ২২ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, করোনা পজিটিভ হওয়া ৯০ ভাগই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বেশি সংক্রমিত জেলা থেকে কুষ্টিয়ায় আসা ব্যক্তি। কুষ্টিয়ায় অদ্যাবধি ৫৭ জন রোগী শনাক্ত হলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৌলতপুরে ১৯ জন। এ ছাড়া ভেড়ামারায় ৬, মিরপুরে ১০, সদরে ৭, কুমারখালীতে ১১ ও খোকসায় ৪ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ রোগী ৪৩ ও নারী ১৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৬ জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসাধীন ৩৩ জন। তাঁদের শারীরিক অবস্থাও ভালো রয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখনো জেলায় কেউ মারা যাননি।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ঈদের পর গত দুই দিনে ব্যাপক হারে রোগী বাড়ছে। এটা উদ্বেগের বিষয়।
রোগী বাড়লেও জেলায় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বেশির ভাগ মানুষ। হাটবাজারগুলোতেও মানুষের উপচে পড়া ভিড়। প্রশাসনকেও আগের মতো আর শক্ত অবস্থানে দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় যানবাহন চলাচল শুরু হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
২৯ মে (শুক্রবার) এর আপডেট
বহিরাগত বাদে জেলায় আদ্যাবধি কোভিড সনাক্ত ৫৭ জন। বহিরাগত সনাক্ত-২।
উপজেলা ভিত্তিক রোগী-
দৌলতপুর-১৯, ভেড়ামারা-৬, মিরপুর-১০, সদর-৭, কুমারখালী-১১, খোকসা-৪
(পুরুষ রোগী-৪৩, নারী রোগী-১৪)
সুস্থ হয়ে ছাড় পেয়েছেন ২৬ জন।
উপজেলা ভিত্তিক সুস্থ- ২৪ জন
দৌলতপুর-৯, ভেড়ামারা-২, মিরপুর-৪, সদর-৩, কুমারখালী-৫, খোকসা-১, বহিরাগত সুস্থ-২
বর্তমানে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ৩৩ জন