আমিনুল ইসলাম (৪৭) গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত। শরীরে করোনা উপসর্গ নিয়েই ঈদের তিন-চার দিন আগে গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের বরইটুপি গ্রামে বাড়িতে আসেন। এসে তিনি নিজেই ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে ছুটে যান করোনা পরীক্ষা করার জন্য। পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়।
আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই তিনি বাড়িতে চিকিৎসা চালিয়ে আসছিলেন। স্থানীয় প্রশাসন তার বাড়িটি লকডাউন করে রাখে। এখন তার সংস্পর্শে এসে স্ত্রী, পাঁচ এবং নয় বছর বয়সী দুই মেয়েসহ পরিবারের আটজন সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে আমিনুলের বড় ভাই, ভাতিজা, বৌমাসহ তাদের সন্তানরাও রয়েছেন।
গত সোমবার (১ জুন) ওই পরিবারের ১৫ জন সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বুধবার রাতে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষায় এদের মধ্যে আট জনের করোনা শনাক্ত হয়।
সদর উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, বরুইটুপি গ্রামের এক ব্যক্তি কয়েক দিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িতে আসেন। তিনি কোভিড–১৯ রোগী ছিলেন। তাঁর পরিবারের আরও আট জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তাদের বাড়িসহ আশেপাশের আরও কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।
ভেড়ামারা উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও সোহেল মারুফ বলেন, ভেড়ামারায় যে চারজন শনাক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। ওই পরিবারের এক ব্যক্তি ঈদের সময় ঢাকায় নমুনা দিয়ে বাড়ি আসেন। তিনি ঈশ্বরদীতে বিয়ে করেন। বিয়ের পর জানতে পারেন তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত। ওই ব্যক্তির বোন, দুলাভাই ও ভাগনে করোনা আক্রান্ত।
পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, আক্রান্ত প্রত্যেকের বাড়িসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে কঠোরভাবে কাজ শুরু করবে।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এ এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বুধবার কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে ৮৬ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একই পরিবারের আটজনসহ ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। যা এ যাবৎকালের কুষ্টিয়া জেলার সর্বোচ্চ করোনা শনাক্তের রেকর্ড। এ নিয়ে কুষ্টিয়ায় মোট ৯০ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হলো। নতুন আক্রান্ত ১৬ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১১ জন, ভেড়ামারা উপজেলায় ৪ জন ও দৌলতপুর উপজেলায় ১ জন।
তিনি আরও বলেন, জেলায় এটিই একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের ঘটনা। ঈদের পর থেকে জেলায় প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ তাঁর। তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার এবং বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
কুষ্টিয়া জেলায় শনাক্ত ৯০ জনের মধ্যে দৌলতপুর উপজেলায় ২২, ভেড়ামারায় ১৫, মিরপুরে ১০, কুষ্টিয়া সদরে ২২, কুমারখালী ১৬ এবং খোকসা উপজেলায় ৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৬৮ জন এবং নারী ২২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২৯ জন। বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৬১ জন।