করোনাভাইরাস সংক্রমণে খুলনা নগরসহ পুরো জেলা অনেকটাই বিপজ্জনক অবস্থানে চলে গেছে। খুলনা জেলায় এক সপ্তাহে কভিড-১৯ শনাক্তের হার বেড়েছে ৯৬ দশমিক ১৫ শতাংশ । বিভাগের ১০ জেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭২৬ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১০ জন। আর আক্রান্তের দিক থেকে বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলাই রয়েছে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থানে।
গতকাল ৭ জুন পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৮১। জেলার সিভিল সার্জন বলছেন, করোনা পজিটিভ হওয়ারা অধিকাংশই বাইরে থেকে খুলনায় এসেছেন। লকডাউনের মধ্যে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় মানুষ অবাধে চলাচলের সুযোগ পেয়েছে। আর এতে করে বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। এ ছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই তথ্য গোপন করায় বা উপসর্গবিহীন থাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ পর্যন্ত খুলনা নগরীতে ৫ জুন সবচেয়ে বেশি ৩০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। নগরীর মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১২০। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে রয়েছে ছোট বয়রা, সোনাডাঙ্গা, ময়লাপোতা, বয়রা, খালিশপুর, হরিণটানা, গোবরচাকা, সিএমভি কলোনি ও হাজী মহসীন রোডের বাসিন্দা। এ ছাড়া জেলা পুলিশ সদস্য, মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্য ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা রয়েছেন। যারা অধিকাংশই জেলার বাইরে থেকে এসেছেন। খুলনা জেলায় এক সপ্তাহে কভিড-১৯ শনাক্তের হার ৯৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৩১ মে করোনা পজিটিভ ছিল ৭৮ জন। আর ৬ জুন এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫৩। এক সপ্তাহে জেলায় ৭৫ জন করোনা পজিটিভ বেড়েছে। ৬ জুন খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে দেওয়া করোনাবিষয়ক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে খুলনা বিভাগে ৩১ মে করোনা পজিটিভ ছিল মোট ৫১৯ জন। আর ৬ জুন এসে এই সংখ্যা হয়েছে ৭২৬। এক সপ্তাহে বিভাগে ২০৭ জন পজিটিভ বেড়েছে। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ৩৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, জেলায় সুস্থতার হার কিছুটা কমেছে। ৬ জুন সুস্থতার হার ছিল ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ (৩৬ জন)। আর ৩১ মে সুস্থতার হার ছিল ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ (২১ জন)। শনাক্ত বাড়ায় কমেছে মৃত্যুর হার। ৩১ মে মৃত্যুর হার ছিল ৫ দশমিক ১২ শতাংশ। আর ৬ জুন এসে এই হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশে।
এদিকে সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ জুন মহানগরীর ১০টি স্থানে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ওই সব স্থানে প্রবেশ বা বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। লকডাউন করা স্থানগুলো হলো মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানার মুজগুন্নি দিঘিরপাড়, ৩১/১৭ হাজী ফয়েজ উদ্দিন রোড, ২/১ সিঅ্যান্ডবি কলোনি, ছোট বয়রা শান্তিনগর মোড়, ৩০/৬ করিম নগর, খুলনা থানার তামিম হাউজ, হাজী মহসিন রোড, বেলায়েত হোসেন সড়ক, ইকবাল নগর হাজী মেহের আলী রোড, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, দোলখোলা ইসলামপুর বাইলেন, হরিণটানা থানার মোস্তার মোড় ও মাতব্বর মার্কেটসংলগ্ন এলাকা।
সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খুলনার সিভিল সার্জন সুজাত আহম্মেদ বলেন, ‘করোনায় টেস্টে পজিটিভ হওয়া ব্যক্তিরা অধিকাংশই বাইরে থেকে খুলনায় এসেছেন। চাকরির সুবাদে হোক বা সাধারণ জনগণই হোক। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই পুলিশ সদস্য। যারা সম্প্রতি ঢাকার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল থেকে খুলনায় এসে যোগদান করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেরই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় মানুষ অবাধে চলাচলের সুযোগ পেয়েছে। অন্যদিকে আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই তথ্য গোপন করায় বা উপসর্গবিহীন থাকায় সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়েছে। ঈদের সময় জেলায় বাইরে থেকে অনেক মানুষ গোপনে এসেছে। তাদের ওপর নজরদারি ছিল না। ফলে খুলনা এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।’
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ করে অন্য জেলা থেকে আগতদের কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। এ কারণে যারা অন্য জেলা থেকে আসছেন তাদের নজরদারিতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধে ‘ডোন্ট মুভ’ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে অন্য জেলা থেকে কেউ আসতে পারবেন না, আবার এখানকার কেউ অন্য জেলায় যাতায়াত করতে পারবেন না।’
খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, ‘খুলনায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে ২১টি চেকপয়েন্টে স্বাস্থ্যবিধি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া শহরের মধ্যে চলাচল ও দোকানপাট খোলার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’