হয়তবা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না/বড় বড় লোকেদের ভীড়ে জ্ঞানী আর গুনিদের আসরে/তোমাদের কথা কেউ কবে না’’। স্বাধীনতার বীর সেনানীদের নিয়ে গওয়া গানটি মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইসমাইল হোসেনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। তার পিতার নাম সঠিক ভাবে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভ বা গনকবরের নামফলকে লেখা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন পলানের পিতার নাম ইব্রাহীম মিয়া হলেও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভ বা গনকবরের নামফলকে লেখা আছে মৃত ছানারুদ্দীন। পিতার নাম বিভ্রাটের কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবারটি হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
গ্রামবাসি জানান, ১৯৭১ সাল। শুরু হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধ। যুদ্ধের দামামা দেখে ঘরে বসে থাকেননি ঝিনাইদহের শৈলকুপার দহকোলা গ্রামের ইব্রাহীম মিঞার ছেলে ইসমাইল হোসেন পলাম। তিনি যোগ দেন মুক্তি বাহিনীতে। শৈলকুপার আবাইপুরে ঐতিহাসিক আবাইপুর যুদ্ধে তিনি যোগ দিয়ে ৪১ জন বীর যোদ্ধার সাথে তিনিও শহীদ হন। আবাইপুর গ্রামেই তাদের গনকবর দেয়া হয়। সেখানকার স্মৃতিফলকে শহীদ ইসমাইল হোসেন সহ ৪১ যোদ্ধার নাম লেখা হলেও স্বাধীনের ৪৭ বছর পরে এসে শহীদ ইসমাইল হোসেনকে আর খুঁজে পাওয়ার উপায় নেই। গণকবরের স্মৃতিফলক সহ শৈলকুপা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে নির্মিত স্মৃতিফলকে তার পিতার নাম সঠিকভাবে লেখা হয়নি। এমন কি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গেজেটসহ স্থানীয় নানা কাগজপত্রেও এই শহীদের বাবার নামটি ভুল ভাবে লেখা হয়েছে। ফলে তার পরিবার-স্বজনের জন্যেও জোটেনি কোন রাষ্ট্রীয় সম্মান, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা।
১৯৭১ সালের সম্মুখ সমরের এই নায়কের স্মৃতি যেন হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির আড়ালে। স্বাধীনতার এই বীরসেনানীদের স্মরণে লেখা “হয়তবা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না/বড় বড় লোকেদের ভীড়ে জ্ঞানী আর গুনিদের আসরে/তোমাদের কথা কেউ কবে না’’ গানটি যেন আজ বড়ই নির্মম সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে শহীদ বীরযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের পরিবারের কাছে। ইসমাইল হোসেনের ভাতিজা আবুবকর সিদ্দিক জানান তার চাচা ইসমাইল মিঞা পলান আবাইপুরযুদ্ধে শহীদ হন। বাড়িতে খবর এলে বড় ভাই হাসেন মিঞা আবাইপুরে যান তার ভাই ইসমাইলকে সনাক্ত করতে। তিনি তার ভাইকে সনাক্ত করে আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের গণ কবরে চিরনিদ্রায় শায়ীত করে আসেন। ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর ইসমাইল মিঞার মা ফুল নেছা পুত্র শোকে পাগল হয়ে স্বাধীনতার ৩/৪ বছর পর মারা যান।
তিনি অভিযোগ করেন সম্মুখযুদ্ধে শহীদ ইসমাইল হোসেনের পিতার নাম স্মৃতিফলকে সঠিক ভাবে লেখা হয়নি। পিতার নাম ইব্রাহীম মিঞা হলেও সেখানে লেখা হয় মৃত ছানারউদ্দিন। আবার শহীদ এ মুক্তিযোদ্ধার বাংলাদেশ গেজেট ১৯১০ এ পিতার নাম খয়বর মিয়া লেখা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টার পরও গেজেট ও নামফলকে নামটি সংশোধন করতে পারেনি।
সরেজমিনে দহকোলা গ্রামে গিয়ে ইসমাইল মিঞার পিতা খয়বর মিয়া বা ছানারউদ্দিন নামে কাউকে খুজে পাওয়া যায়নি। মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম জানান, ইসমাইল হোসেন মিঞা পলানের পিতার নাম মৃত ইব্রাহীম মিঞা। তিনি খয়বর মিয়া বা ছানারউদ্দিনের সন্তান না, এ নামে গ্রামে কেউ নেইও।
শৈলকুপা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার রহমত আলী মন্টু বলেন, ইসমাইল হোসেন আবাইপুরে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। তার নাম আবাইপুর ও শৈলকুপার স্মৃতিফলকে লেখা আছে। কিন্তু পিতার নাম ভুল। পিতার নাম সঠিকভাবে লিখা উচিৎ।