ছবির এই মানুষটির নাম মওলা বকস (৮৬)। যিনি জীবনের ৭০ বছর ধরে পায়ে হেটে চলেছেন শত শত মাইল। হাটা থামাননি। ৮৬ বছর বয়সেও তিনি নিরন্তর পায়ে হেটেই সারেন তার প্রয়োজনীয় কাজকর্ম।
মুক্তিযুদ্ধ করেছেন,নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। সর্বশেষ যাচাই-বাচাইয়ে তিনি ভাইভাবোর্ড ফেস করে এখন অপেক্ষায় আছেন, স্বপ্ন দেখছেন জীবনের শেষ বেলায় তার নাম উঠবে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়্।
মওলা বক্সের হেঁটে চলার বিষয়টি এ প্রজন্মের অনেকের কাছেই রুপকথার গল্পের মত আজব মনে হলেও,মোটেই গুজব নয়।
৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া জানা ২ মেয়ে ও ২ ছেলের জনক অশিতিপর মওলা বক্স’র বাড়ী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের আবুরী গ্রামে। পিতার নাম মৃত জেহের আলী।
মওলা বক্স যখন যুবক বয়সে দুরন্ত গতিতে হেঁটে চলতেন তখন এলাকার মানুষ তাঁকে ঝড়ের পাখি,তুফান মেইলসহ বিভিন্ন নামে তাঁকে আখ্যায়িত করতেন। বর্তমানে ৮৬ বছরের মওলা বক্স এ যুগের যে কোন তরুণের সাথে লং দুরত্বের হাঁটা প্রতিযোগীতায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাঁটতে চান।
ছোটবেলা থেকেই হাঁটার অভ্যাস থাকায় ৮৬ বছরে একদিনও গুরুত্বপুর্ণ ঔষধ সেবন করতে হয়নি তাকে।
হাঁটার কারন জানতে চাইলে মওলা বক্স বলেন,ছোটবেলায় অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় হেঁটেই চলতে হতো মানুষকে। হাঁটার শুরু সেখান থেকেই।
তিনি আরো জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মারফত আলীর অধীনে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মারফত আলীর কৌশলগত অনেক গোপন সংবাদ মওলা বক্সের মাধ্যমে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌছানো হত।
মারফত আলীর গোপন চিঠি নিয়ে মওলা বক্স সকাল ৭/৮ মধ্যেই নিজ গ্রাম আবুরী থেকে মেহেরপুর, মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা, শিয়ালমারী হাট, ঝাঝারী বিল ও আব্দুলপুর রেলওয়ে ষ্টেশন ঘুরে আবার ওইদিন বিকাল ৩/৪ টার মধ্যে আবার তিনি ফিরে আসতেন বাড়ীতে।
এতরাস্তা কিভাবে যেতেন এবং আবার ওইদিনই বাড়ীতে ফিরতেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হাঁটা শুরু হলে তিনি একটা আধ্যাত্ব শক্তি অনুভব করেন। যার ফলে ক্লান্তিহীন দ্রুত হাটতে পারতেন।
এছাড়াও তিনি বাড়ী থেকে প্রাগপুর ও ইশ্বরদী পর্যন্ত পায়ে হেঁটে আবার দিনে দিনেই বাড়ী ফিরতেন।
ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে প্রথম যখন পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয় তখন তিনি বাড়ী থেকে পায়ে হেঁটে ওই রাস্তার নির্মাণকাজ দেখতে গিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।