মোবাইল ফোন ও টাকা চুরির অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে সারোয়ার হোসেন শুভকে (২০১৫-১৬, অর্থনীতি) বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু হল থেকে এবং সাদিয়া (২০১৬-১৭, বাংলা) নামের এক মেয়েকে একই দিন দিবাগত রাত দুইটার দিকে শেখ হাসিনা হল থেকে আটক করে শিক্ষার্থীরা। দুজনই চুরির দায় স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।
এই ঘটনায় শুভ নামের ওই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে দুটি ফোনসহ বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি। অন্যদিকে সাদিয়ার কাছ থেকে নগদ প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার টাকা উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে রেখেছে হল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. নাসিমুজ্জামান বলেন, গতকালের (বৃহস্পতিবার) ঘটনায় শুভ নামের এক শিক্ষার্থীকে ইবি থানা পুলিশে দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরীন বলেন, যেহেতু সে (সাদিয়া) একটি মেয়ে। তার সম্মানের কথা চিন্তা করে আমরা এখনো পুলিশে দিইনি। দুইটার পরে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব। এখন সে আমাদের হল কর্তৃপক্ষের হেফাজতে আছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাস ধরে ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলোতে আশংকাজনকভাবে চুরির ঘটনা বেড়েছে। প্রতিনিয়তই মানিব্যাগ কিংবা মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা ঘটে আসছিলো। এ নিয়ে পত্র-প্রত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও কর্তৃপক্ষ তেমন কোন প্রতিকার করতে পারেনি।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু হলে প্রবেশ করে দুটি ফোন চুরি করেন শুভ নামের ওই শিক্ষার্থী। এসময় শিক্ষার্থীরা তাকে সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে একপর্যায়ে চুরির কথা স্বীকার করেন। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এসময় তিনি আরো তিন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করেন। যাদের দুজন বঙ্গবন্ধু হল এবং একজন লালন শাহ হলে থাকে বলে জানান। ওই তিনজনের সঙ্গে তার ফোন কেনা-বেচার সম্পর্ক বলেও জানান। তবে অভিযুক্তের মা রিনা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের কাছে আব্দুর রহিম স্বপ্ন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ২০১৫-১৬) নামের এক শিক্ষার্থীর না উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, তার ছেলেকে খুঁজতে বৃহস্পতিবার স্বপ্ন তাকে চারবার ফোন করে। স্বপ্ন’র ফোন পেয়েই কুষ্টিয়া শহর যাওয়ার নাম করে থেকে ছুটির দিনেও ক্যাম্পাসে যায় শুভ।
প্রায় ডজন খানেক মোবাইল চুরি ও বেচাকেনার কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করে শুভ জানান, আমি হলের মধ্যে ঢুকে আচমকা একটি রুমে প্রবেশ করতাম। তখন যদি কেউ টের পেতো তবে কৌশলে বলতাম ‘এটা অমুক নম্বর রুম না’ তখন কেউ সন্দেহ করতো না। আর যদি রুমে কেউ না থাকতো তবে মোবাইল নিয়ে চলে আসতাম।’ মাদকের টাকা জোগাড় করতেই এই চুরির পথ বেছে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
এদিকে শেখ হাসিনা হলের সাদিয়া নামের ওই শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আনুমানিক দুইটার দিকে হলের পুরাতন ব্লকের গণরুমে (১০৭ নং) প্রবেশ করেন। এ সময় ওই রুমের শিক্ষার্থীরা টের পেয়ে এতরাতে কেন এসেছে তা জিজ্ঞাসা করে। অভিযুক্ত ওই ছাত্রীর কথায় অংসলগ্নতা দেখে তাকে আটক রাখে ছাত্রীরা। পরে কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তল্লাশি করে তার রুম থেকে টাকাসহ একটি বেওয়ারিশ নাকের নোলক উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মন বলেন, গতকালের ঘটনায় একজনকে পুলিশে প্রেরণ করা হয়েছে। এবং আজকের ঘটনায় ওই মেয়েকে আমরা নিরাপদে হল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছি। প্রভোস্ট বডি বাকি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ইবি থানার ওসি জাহাঙ্গীর আরিফ বলেন, মোবাইল চুরির ঘটনায় একজনকে আমরা আটক করেছি। বিষয়টি মামলার প্রক্রিয়া চলছে।