বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডকে বাকস্বাধীনতার ওপর নিষ্ঠুরতম আঘাত বলে আখ্যায়িত করেছে কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করার মাধ্যমে অতিদ্রুত এই শাস্তি বাস্তবায়নের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে টিআইবির উদ্যোগে কুষ্টিয়া বকচত্বরে আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এই দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একের পর এক রক্তক্ষয়ী সহিংসতা, দুর্নীতি ও অনিয়ম, দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবদুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা এবং একই কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যত নিষ্ক্রিয়তার ফলে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী আদর্শিক ছাত্র আন্দোলনের অস্তিত্ব বর্তমানে সংকটের সম্মুখীন। তাই ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও ছাত্র আন্দোলনের গৌরবময় ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে সকল ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষাঙ্গনকে সম্পূর্ণ দলীয় রাজনীতিমুক্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষায় বলীয়ান করার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা।
নিহত আবরার ফাহাদের শিক্ষক, কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও স্বজন সমন্বয়ক খোন্দকার আমানুল্লাহ বলেন, অত্যন্ত বিনয়ী, সদালাপী, নিরহংকারী এবং দেশভক্তি ছিল আবরারের চরিত্রের প্রধান দিক। একজন শিক্ষক হিসেবে তার হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর দেখতে চাই।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও সনাকের সহসভাপতি ড. সরওয়ার মুর্শেদ বলেন, বাকস্বাধীনতা এবং মুক্তমত প্রকাশের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের যে গৌরবোজ্জ্বল অতীত ও অবিস্মরণীয় ভূমিকা তাকে ম্লান করে দিচ্ছে ছাত্রসংগঠনের ওপর দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির এই নিষ্ঠুর প্রভাব। এ সময় আর কোনো ফাহাদ যেন মত প্রকাশ করতে গিয়ে প্রাণ না হারায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি হত্যায় জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সনাক সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারের প্রতি দাবি, ‘তারা যেন উপলব্ধি করেন, ফাহাদ হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিনের লালিত মরণব্যাধির একটি লক্ষণ মাত্র। এর প্রতিকার সরকারেরই হাতে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে।’
এ সময় ছাত্র রাজনীতির নামে শিক্ষাঙ্গনে দুর্বৃত্তায়ন থেকে যারা লাভবান হয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তিনি।
টিআইবির এরিয়া ম্যানেজার মো. আরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- মানবাধিকার কর্মী জেসমিন হোসেন মিনি, সনাক সদস্য আক্তারী সুলতানা, প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কুষ্টিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজকর্মী, মানবাধিকার ও উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক কর্মীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।