রাজধানীর তেজগাঁওয়ের আরজতপাড়ায় খুন হওয়া খ্রিষ্টান বৃদ্ধা মিলু মিলড্রেড গোমেজকে দক্ষ ও শক্তিশালী কেউ হত্যা করেছিল। হত্যাকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেছিলেন মিলু। লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এদিকে পুলিশ বলছে, ঘটনাটি উদ্ঘাটনের ক্লু পেয়েছে তারা। শিগগিরই জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
আরজতপাড়ায় গত তিন বছরে দুটি খ্রিষ্টান পরিবার ডাকাতির শিকার হওয়ায় এবং সর্বশেষ মিলুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই এলাকায় বসবাসকারী খ্রিষ্টান পরিবারগুলো আতঙ্কে রয়েছে। তারা বলছে, এই এলাকায় ঘটে যাওয়া তিনটি ঘটনাই খ্রিষ্টান পরিবারকেন্দ্রিক হওয়ায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা চিন্তিত।
গত শুক্রবার সকালে আরজতপাড়ার নিজেদের বাসা থেকে মিলু মিলড্রেডের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তাঁর স্বামী অনিল হিউবার্ট গোমেজ (৮০) বাসায়ই ছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধ ও অসুস্থ এই লোক ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে পারেননি। পুলিশ শুক্রবারই বাসার গৃহকর্মী এবং অনিলকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তাঁদের বাসায় কিরণ নামের যে ব্যক্তি বাজার করে দিতেন, তিনি এখনো পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বৃদ্ধ এই দম্পতির চার ছেলে। এর মধ্যে তিনজনই কানাডাপ্রবাসী, অন্যজন আমেরিকার। মিলু মিলড্রেড ছিলেন গৃহিণী আর অনিল হিউবার্ট একসময় আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন। মিলুর দুই ছেলে কানাডা থেকে এলেই তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
মিলু মিলড্রেড গোমেজের লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘তাঁকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। হাতে কিছু দাগ রয়েছে। যেগুলো ধস্তাধস্তির ইঙ্গিত বহন করে। যে করেছে সে শক্তিশালী। গলার কাটাটি সোজা ছিল।’
ঘটনার সঙ্গে ওই বাসার বাইরের লোকজন জড়িত ছিল উল্লেখ করে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এটা একটা ক্লু-লেস মামলা ছিল। ক্লু পাওয়া গেছে। দু-এক দিনের মধ্যে ভালো রেজাল্ট দেব। বাড়ির লোকজন জড়িত ছিল, না বাইরের লোকজন জড়িত ছিল।’
আরজতপাড়ার যে গলিতে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে সেখানে গোটা ২৫ খ্রিষ্টান পরিবারের বাস। যে কয়েকটি বাড়ি রয়েছে তার মধ্যে ৯টি বাড়ির মালিক খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। ২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই গলিরই রবিন গোমেজের বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তাঁদের বাসা থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় ছয় থেকে সাতজন ডাকাত। এর এক বছরের মাথায় ওই গলিরই আরেকটি বাসায় (মিলু মিলড্রেডের বাসার উল্টো পাশের বাসা) খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী তিন ভাইবোন দুর্বৃত্তদের গুলি ও কোপে আহত হন।
এলাকার বাসিন্দা সাগর ডি কস্তা বলেন, নিয়মিত বিরতি দিয়ে খ্রিষ্টান পরিবারেই এমন তিনটি ঘটনা ঘটায় তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আগের দুটো ঘটনার কোনোটারই সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ায় কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
রবিন গোমেজের মেয়ে তেরেজা কৃষ্ণা গোমেজ গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনায় তাঁরা মামলা করেছিলেন। প্রায় দেড় বছর অপেক্ষা করার পর পুলিশ কিছু করতে না পারায় তাঁরা মামলা তুলে নেন। তিনি বলেন, বেছে বেছে খ্রিষ্টান পরিবারেই ঘটনাগুলো ঘটায় এলাকার কোনো লোক এর সঙ্গে জড়িত বলে তাঁরা সন্দেহ করছেন। এখান থেকে কেউ না কেউ তথ্য সরবরাহ করছে বলে তাঁদের ধারণা।
খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত আই কোরাইয়া বলেন, আগের ঘটনাগুলোতে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা সম্ভব হলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি হয়তো ঘটতই না। এলাকার অন্য বাসিন্দারা আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। সামনের বড়দিনের আগেই হত্যাকাণ্ডটির একটা সুরাহা হবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।