সুইজারল্যান্ডের ব্যাঙ্কগুলিতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ এখন ৬১৭.৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এক বছরে সুইস ব্যাঙ্কগুলিতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ১ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। আগের বছর আমানতের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৯ কোটি টাকা।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (এসএনবি) ‘ব্যাঙ্কস ইন সুইজারল্যান্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন কারণে সুইস ব্যাঙ্কে আমানত বাড়ছে এবং বাড়ার বিষয়টিকে নেতিবাচক মনে করারও কারণ নেই। বরং এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশিদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়ার বিষয়টিও নির্দেশ করে।
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ বলেন, তাঁর মতে চার কারণে সুইস ব্যাঙ্কে বাংলাদেশিদের টাকা বাড়ছে।
প্রথমত, দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকা ও বিনিয়োগ বৈচিত্র্য আনতে অনেকেই বিদেশে টাকা নিয়ে যান। আর সেই টাকা হয়তো রাখছেন সুইস ব্যাঙ্কে। সুইস ব্যাঙ্কে যে টাকা জমা হয়, তা মূলত ধনীদের জমানো টাকা। বাংলাদেশের বড় ধনী যাঁরা, তাদের সেখানে টাকা জমা হচ্ছে। আর প্রয়োজন অনুযায়ী, সেখান থেকে টাকা তুলে যখন তখন বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে।
সুইস ব্যাঙ্কে টাকা জমানোর দ্বিতীয় কারণ হল, যাঁদের কাছে কালো টাকা রয়েছে তাঁরা বাংলাদেশে ঘোষণা করে বিনিয়োগ করতে চায় না। ধারণা করা হয়, যিনি কালো টাকা বিনিয়োগ করবেন, তিনি চিহ্নিত হয়ে যাবেন। এতে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি দ্বারা হয়রানি হতে পারেন। অথবা সরকার পরিবর্তন হলে হয়রানির শিকার হতে পারে। এই কারণে সুইস ব্যাঙ্ককে নিরাপদ মনে করা হয়।
সুইস ব্যাঙ্কে টাকা জমানোর তৃতীয় কারণ হল, বৈধ পথে আয় করা টাকাও বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন হয়। যেমন, ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন দেশে পড়ালেখা করানোর জন্য সুইস ব্যাঙ্কে টাকা রাখছেন। কারণ, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে যে ঝামেলা পোহাতে হয়, তা থেকে বাঁচতে অনেকে সুইস ব্যাঙ্কে টাকা রাখছেন।
সুইস ব্যাঙ্কে টাকা জমানোর চতুর্থ কারণ, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার মতো আর কোনও জায়গা না থাকার কারণেও অনেকে সুইস ব্যাঙ্কে টাকা রাখছেন। এখন বাংলাদেশে একটি ধনী শ্রেণী তৈরি হয়েছে। তাঁরা দেশের সব ধরণের সুযোগ ইতিমধ্যে নিয়ে ফেলেছেন। আর কোনও সুযোগ নেওয়ার কিছু নেই। ফলে অনেকে বিনিয়োগে বৈচিত্র আনতেও বিদেশে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আর সেই টাকা রাখছে সুইস ব্যাঙ্কে।
প্রসঙ্গত, সুইজ্যারল্যান্ডের ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদের তথ্য সাধারণত গোপন রাখে। সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ঘোষণা অনুযায়ী, নাগরিকত্ব গোপন রেখেছে, এমন বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থ এই হিসেবের মধ্যে রাখা হয়নি।