যশোরে আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে বহুলালোচিত কয়েকটি কলগার্ল ও ব্লাক মেইলিং সিন্ডিকেট। খরিদ্দার প্রতি চক্রের হোতা ১ থেকে দু’হাজার টাকা নিলেও কলগার্লরা মাত্র তিন’শ টাকা করে পাচ্ছেন বলে তাদের দাবি। তবে খরিদ্দারকে ব্লাক মেইল করে হাতানো টাকা হচ্ছে ভাগবাটোয়ারা।
শহরে ফ্লাট ভাড়া করে চলছে জমজমাট এ কলগার্ল ব্যবসা ও সাপ্লাই কার্যক্রম। গত বছর যশোরের বহুলালোচিত ব্লাক মেইলিং কলগার্ল সিন্ডিকেটের ইয়াবা সুন্দরী খ্যাত ৩ মহিলা এখন জামিনে এসে তাদের কার্যক্রম ফের শুরু করেছে। একইসাথে ডজনখানেক সিন্ডিকেট এখন বেপরোয়া। আবার যশোরাঞ্চলের একটি পার্কের দুটি ঘরে চলছে একটি সিন্ডিকেটের ডেরা।
গত বছর বিভিন্ন পত্রিকায় ডজনখানেক কলগার্ল সিন্ডিকেট নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে গোয়েন্দা পুলিশসহ থানা পুলিশ মাঠে নামে। পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় উপশহর এলাকার একটি সিন্ডিকেট হোতার খোঁজে অভিযান চলে। ওই সিন্ডিকেট প্রধান বাসা পাল্টিয়ে চলে যায়। ২৯ আগস্ট রাতে শহরের চোরমারা দীঘিরপাড় ও বকচর এলাকার দুটি ডেরায় অভিযান চালায় পুলিশ। আটক হয় ৩ কলগার্ল। পত্রিকার সংবাদ ও পুলিশি অভিযানে বেসামাল হয়ে পড়ে গোটা কলগার্ল সিন্ডিকেট। ব্লাকমেইলিং ও কলগার্ল সিন্ডিকেটের চিহ্নিতরা তখন গা ঢাকা দেয়।
এখন শহরের বিভিন্ন স্পটে মিম সিন্ডিকেট, কেয়া সিন্ডিকেট, ভিআইপি কলগার্ল নুপুর ওরফে মোটা নিলু, রাজার হাটের আলোচিত একটি সিন্ডিকেট, চুড়ামনকাটি এলাকার সিন্ডিকেট আকরাম গং, জেসটাওয়ার এলাকার কলগার্ল ডলি, আঁখি সিন্ডিকেট, সুবর্ণা সিন্ডিকেট, হালিম সিন্ডিকেটসহ ডজনখানেক সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়েছে।
ব্লাকমেইলিং করাসহ শহরতলীর নির্দিষ্ট কিছু সরকারি অফিসের কলগার্ল পিপাসুদের কাছে মেয়ে সাপ্লাই দিয়ে চলেছে চক্রটি। যশোর শহর ছাড়াও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে কলগার্ল সাপ্লাই দিয়ে আসছে সিন্ডিকেটগুলো। আর কলগার্লদের রিপোর্টিং অফিস কাম দেহব্যবসার ডেরায় এক আধা ঘন্টা সময় কাটাতে এক হাজার থেকে দু’হাজার টাকা হাতানো হচ্ছে। ফাঁসাতে হবে এমন টার্গেট করা সম্মানীয় ও ধনী খরিদ্দারদের কাছে কলগার্ল সাপ্লাই দেয়া হচ্ছে। আর ওই খরিদ্দারের বাসা বা তার পছন্দমত জায়গায় পৌঁছে মিনিট দশেক পরে মেয়েটি অথবা ডেরা প্রধান ফোন দিচ্ছে কতিপয় অসাধু পুলিশকে। আবার চক্রের কেউ কেউ পুলিশ সেজে থানায় দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কলগার্লকে দেয়া হচ্ছে টাকার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। বাকি টাকা ভাগবাটোয়ারা হচ্ছে।
যশোর শহরের মাইকপট্টির আল আমিন আবাসিকে জমজমাট দেহব্যবসা ও ব্লাক মেইলিং কারবার চালিয়ে যাওয়া ম্যানেজার নামধারী সিন্ডিকেট প্রধান বলরামপুরের আব্দুল হালিম এখন সাপ্লাইয়ের কাজ করছে বলে তথ্য মিলেছে। এক মহিলাকে ফুঁসলিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করানোর ঘটনায় হালিম সিন্ডিকেটে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে তাকে অদ্যাবধি আটক করতে পারেনি। যশোরাঞ্চলের একটি পার্কে রীতিমত ঘর করে ঘন্টা চুক্তি অসামাজিক কার্যক্রম চলছে বলেও অভিযোগ এসেছে।
তথ্য মিলেছে, সিন্ডিকেটগুলো খরিদ্দারের আপত্তিকর অবস্থার ভিডিও ও স্টিল ছবি ধারণ করে অর্থ দাবি করে। বাকিতেও খরিদ্দারদের ছেড়ে দিয়ে ব্লাকমেইলিং অব্যাহত রাখছে এই চক্রগুলো। ডেরা মালিক নিজে নেয় ৬০ শতাংশ টাকা। আর কলগার্লসহ অন্যদের দেয় ৪০ শতাংশ। ডেরায় রাখা দেহপসারিনীদের খরিদ্দারপ্রতি যৎ সামান্য দেয়ায় তারা ডেরায় স্থায়ী হয় না বলে তাদের অভিযোগ।
একটি সূত্র জানিয়েছে, যশোর শহরের কয়েকটি ভিআইপি এলাকায় ফ্লাট ভাড়া নিয়ে কাউকে স্ত্রী সাজিয়ে, কাউকে শ্যালিকা, আবার কাউকে ভাগ্নি পরিচয়ে রেখে সিন্ডিকেট চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।