যশোরাঞ্চলে সংঘবদ্ধ প্রাইভেট ও ট্রাক চোর সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। সিন্ডিকেটে ৩ ডজনের মত পেশাদার চোর ও প্রতারক চক্র কাজ করছে। যারা নির্দিষ্ট ক্রেতা সিন্ডিকেটের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়েও প্রাাইভেট বা ট্রাক চুরি করে দিচ্ছে।
সম্প্রতি রাজশাহী থেকে কয়েকটি প্রাইভেট ও ট্রাক চুরি করে সেখান থেকে একটি চক্র যশোরে পাঠিয়েছে। রাজশাহী জেলা ডিবি যশোরের ঘোপ এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে একটি প্রাইভেট উদ্ধার করেছে। একইসাথে আরও কয়েকটি চুরি ও বিকিকিনি চক্রের সন্ধান পেয়েছে ডিবির ওই টিমটি।
গত কয়েক বছরে সিন্ডিকেটের সদস্যরা শতাধিক গাড়ি হাত বদল করেছে এবং গাড়িগুলো এক জেলা থেকে অন্য জেলায় কেটে কেটে রঙ ও বডি বদল করে বিক্রি করেছে।
যশোর শহরের বকচর এলাকার কয়েকটি চিহ্নিত গ্যারেজে গোপনে চোরাই গাড়ি মেরামত ও যন্ত্রাংশ খুলে অথবা কেটে বিক্রিতে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। পুলিশের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা এসব গ্যারেজ মালিক এবং চোরাই গাড়ি বিকিকিনির সাথে জড়িতদের কাছ থেকে একজন প্রভাবশালী অফিসার মাসোহারা পেয়ে থাকেন এমন অভিযোগও ওঠে। যে কারণে বকচরের চিহ্নিত গ্যারেজগুলোতে চোরাই গাড়ি কেটে ফেলা অথবা মেরামত করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এসব কারণে চোরাই গাড়ি কারবারীরা বেপরোয়া স্টাইলে তাদের অবৈধ কারবার চালিয়ে থাকে।
সম্প্রতি রাজশাহী থেকে বেশ কিছু প্রাইভেট ও ট্রাক চুরি হলে সেখানকার জেলা গোয়েন্দা শাখা তদন্তে নামে। গোয়েন্দা ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান তথ্য পান অন্য জেলা থেকে চুরি করে আনা প্রাইভেট বা ট্রাক যশোরে, আর যশোর থেকে চুরি করা প্রাইভেট ট্রাক অন্য জেলায় নিয়ে কেটে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।
এর আগে যশোরের বকচর এলাকার কয়েকটি গ্যারেজ থেকে অনেক ট্রাক ও প্রাইভেটের খন্ডখন্ড অংশ উদ্ধার হয় এমন তথ্যও যায় তার কছে। ওই তথ্যে ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে যশোর কোতোয়ালী থানাকে অবহিত করে যশোরে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি যশোরের বকচর এলাকা, উপশহর এলাকা, ঘোপ ও ঢাকা রোড এলাকায় গোপন অভিযান পরিচালনা করেন। এক পর্যায়ে ১১ জুলাই দুপুরে ঘোপের সাজেদুর রহমানের গ্যারেজ থেকে রাজশাহী থেকে চুরি হওয়া একটি প্রাইভেট উদ্ধার হয়। বকচর সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি ওই প্রাইভেটটি সাজেদুরের গ্যারেজে রেখে যায়। তবে মনিরকে আটক করতে পারেনি রাজশাহী ডিবি।
থানা সূত্র জানিয়েছে, বকচর হুশতলা, মুড়লী এলাকা, চৌধুরী পাড়া এলাকাসহ আরও কয়েকটি এলাকার চিহ্নিত কয়েকটি গ্যারেজে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেট কার ও কাভার্ড ভ্যান চুরি করে এনে বিকিকিনি করে এমন তথ্যও দেয়া হয়েছে রাজশাহী ডিবিতে। এসব গ্যারেজের কয়েকটিতে আবার গাড়ির বডি বানিয়ে দেয়া হয়। আবার মেরামতের আড়ালে চিহ্নিত কয়েকটি গ্যারেজে গোপনে চোরাই গাড়ি কেনা-বেচা করা হয় এমন অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, চিহ্নিত গ্যারেজগুলোতে চোরাই গাড়ি কেটে অথবা যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে দিতে সহায়তা করা হয়। রাতারাতি একটি গাড়ির যন্ত্রাংশ অবৈধভাবে অন্য গাড়িতে সংযোজন এবং রঙ পরিবর্তন করে দেয়া হয়।
এসব তথ্যে অভিযান পরিচালনা শেষে ১১ জুলাই সন্ধ্যায় ডিবি ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান জানিয়েছেন, যশোরাঞ্চলে মনির হোসেনসহ সিন্ডিকেটের ডজন খানেক সদস্যকে খোঁজা হচ্ছে। তারা রাজশাহী এলাকার কয়েক ডজন প্রাইভেট ও ট্রাক চুরি করেছে সন্দেহ করা হচ্ছে। ওগুলো যশোরে বিকিকিনি হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেয়া হবে। রাজশাহী এলাকায় চুরির ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে তাতে এ্যারেস্ট করা হবে।
তিনি আরও জানান, চিহ্নিত গ্যারেজগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সোর্স কাজে লাগিয়ে আরও অভিযান চালানো হবে। চোরাই গাড়ি সংক্রান্ত বহু অপরাধ ধরা পড়তে পারে। অনেক রাঘব-বোয়ালের নামও বেরিয়ে আসতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে।