কুষ্টিয়ার মিরপুর ফুটবল মাঠের মেলার প্রধান আকর্ষণ
মৃত্যুকে অনেকবার কাছ থেকে দেখেছেন। ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচেছেন। তবুও খেলা ছাড়েননি।
হুমায়ূন কবির :- বলছি গত ১৪ এপ্রিল থেকে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলার প্রধান আকর্ষণ মুত্যকুপের ভিতর মোটর সাইকেল ও প্রাইভেট কার চালানোর রুপকার মাহফুজ আলী (৩০) কথা।
একটা পুরনো মোটরসাইকেল। অবস্থা যাচ্ছেতাই। যন্ত্রাংশেও মরীচিকা ধরেছে। দেখে মনে হবে চলাচলের অনুপযোগী। তাতে কি? মাহফুজের ছোঁয়া পেলেই যেন মোটরসাইকেলটি প্রাণ ফিরে পায়। ছুটতে থাকে দুরন্ত গতিতে। তাও আবার যে সে পথ দিয়ে নয়। ভয়ঙ্কর এক পথ পাড়ি দিয়ে।
অসংখ্য সরু কাঠের ফালি পাশাপাশি দাঁড় করানো। তৈরি করা হয়েছে কূপের মতো একটা বৃত্ত। যার পুরোটাই ঝুঁকিতে ভরা। এটাই নাকি মাহফুজের চলার পথ। একটু এদিক-সেদিক হলেই মারাত্বক দুর্ঘটনাতো বটেই, মৃত্যু ঘটলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই। তবু মৃত্যু ভয়কে তুচ্ছ করে ধরে রেখেছেন ‘মৃত্যুকূপ খেলা’।
মিরপুর ফুটবল মাঠের বৈশাখী মেলায় দেখা যায়, মাহফুজ মোটরসাইকেল স্টার্ট দিলেন। ভূমিতে দুই-চারবার ঘুরলেন। এরপরেই মোটরসাইকেল নিয়ে কাঠের দেয়ালে উঠলেন। ধীরে ধীরে গতি বাড়ালেন। চোখের পলকেই বৃত্তাকার দেয়ালে ঘুরতে লাগলেন। কখনো উপরে, কখনো মাঝখানে। কখনো দুহাত উপরে, কখনো দুপা হ্যান্ডেলে। খেলা দেখাতে লাগলেন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে।
উৎসুক দর্শকের কেউ কেউ ভয়ে ততক্ষণে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। অনেকের গাঁ শিহরে উঠেছে, চোখের সামনে এরকম ভয়ঙ্কর খেলা দেখার সাহস নেই আর। এভাবে মিনিট দশেক খেলা চললো। এবার খানিকটা বিরতি। ততোক্ষণে আরো দর্শক আসতে শুরু করেছে। সবার মধ্যেই বেশ কৌতূহলী ভাব। তবে এবার শুধু মোটরসাইকেল নয়। বদৌলতে দেখা গেল একটা প্রাইভেট কার। কৌতুহলী দর্শকের টান-টান উত্তেজনা।
তবে মাহফুজ কি এবার প্রাইভেট কার দিয়ে গাড়ি খেলা দেখাবে? কাঠের ঝুঁকিপূর্ণ দেয়ালে কি গাড়ি চালানো সম্ভব? এমনি প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে দর্শক মহলে। মোটরসাইকেলের ন্যায় প্রাইভেটকার দিয়েও খেলা দেখাতে লাগলেন। চার চাকার এ প্রাইভেট কারের উপরেও তার অবিশ্বাস্য নিয়ন্ত্রণ। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই খেলায় ‘প্রাইভেট কার’ এর সংযোজন ঘটান। সত্যি দেখলেই যেন চমকে যেতে হয়। খেলা শেষ হওয়া মাত্রই করতালি দিয়ে সবাই তাকে স্বাগত জানালো।
এভাবেই দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ‘মৃত্যুকূপ খেলা’ দেখিয়ে আসছেন জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা-পড়া জানা প্রতিভাবান এই তরুণ। ভয়ঙ্কর এই খেলাকে এখন মাহফুজ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ডাক পেয়েছেন দেশের ৬৪ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।
মাহফুজ বলেন, শখ করে এই খেলা দেখাতে গিয়ে এখন পেশা হিসাবে নিয়েছি। তিনি বলেন বাবার অনুপ্রেরণা দোয়া ও প্রবল ইচ্ছে শক্তির কারনে আমি এই অসাধ্যকে সাধন করেছি। কখনো দুর্ঘটনা ঘটেনি? এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহফুজ বলেন, দুর্ঘটনা খেলার অংশ। কয়েকবার আহত হয়েছি। ভেবেছি খেলা ছেড়ে দিব। কিন্তু পারিনি। নেশার মতো বারবার ফিরে এসেছি ভয়ঙ্কর এ মৃত্যুকূপ খেলায়।