বিয়ের সংখ্যা নিয়েও দ্বিধা কেউ বলছে ৪টি কেউ বলছে ৫টি
রানা মন্ডল। বয়স কুড়ির নিচে। এ কুড়িতেই ৪টি বিয়ে করে এলাকায় রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তবে তিনটি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন তিনি। এরপর সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ জুলাই স্কুল পড়ুয়া এক মেয়েকে বিয়ে করেছে এই রানা। নিজের বয়স ১৯ বছর হলেও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ জালিয়াতি করে বয়স বাড়িয়ে একের পর এক বিয়ে করছেন। এ নিয়ে বিচার-শালিসও হয়েছে। নাবালক ছেলেকে বারবার বিয়ে দেওয়ায় বাবা রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ মন্ডলকে আটক করেছে পুলিশ।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ মন্ডলের ছেলে আলোচিত এই রানা। গতকাল সোমবার বিকেল সরেজমিনে রানার গ্রামে তার পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রানা রাজমিস্ত্রির কাজ করে। বর্তমানে মেহেরপুরে আছে সে।
স্থানীয়রা জানান, ‘রানা লেখাপড়া বেশি দুর করতে পারেনি। রাজমিস্ত্রির কাজ করে সে। ২০১৭ সালের জানুযারি মাসে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় প্রথম বিয়ে করে রানা। বিয়ের কয়েক মাস পর তার প্রথম সংসার ভেঙ্গে যায়। এরপর মিরপুর উপজেলার কচুবাড়িয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করে। সেই স্ত্রীও নানা কারনে চলে যায় ৫ মাস পর। এর কয়েক মাস পর ফের দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডিতে রানা তৃতীয় বিয়ে করে। সে সংসারও টেকেনি। এরপর সর্বশেষ চলতি মাসের ২০ জুলাই ভেড়ামারায় মৌসুমী নামের এক স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করে রানা।
এলাকার মাতব্বর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আলী আসমত জানান,‘ এর আগে রানা বিয়ে নিয়ে বেশ কয়েকবার বিচার-শালিস হয়েছে। তারপরও এ কাম চলছেই। তারা কাউকে না জানিয়ে একের পর নাবালক ছেলেকে বিয়ে দিচ্ছে। জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি করে এ কাজ করে আসছে রানা ও তার পরিবারটি।
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই একটি জন্ম নিবন্ধন নেন রানা মন্ডল। সেই জন্ম নিবন্ধনে বয়স দেখানো হয়েছে ২১ বছর। তবে বয়স প্রমানের জন্য কোন কিছু জমা দেয়া হয়নি ইউনিয়নে। ইউনিয়নের তৎকালিন চেয়ারম্যন খন্দকার টিপু সুলতান ও সচিবের অনুরোধে ইউনিয়ন পরিষদের ইউসিডি কর্মি এ জন্ম নিবন্ধন রানার নামে ইস্যু করেন।
এ জন্ম নিবন্ধন সব বিয়েতে ব্যবহার করেছে সে। রানার বাবা কৃষি শ্রমিক রাশেদ মন্ডল বলেন, ‘ছেলের জন্ম তারিখ আমার মনে নেই। তবে আমার মেয়ের বয়স বর্তমানে ১১ বছর। মেয়ের থেকে ছেলের বয়স ৮ থেকে ৯ বছর বেশি। গত দেড় বছরে ছেলে ৪টি বিয়ে করেছে জানিয়ে বলেন, প্রথম দুই বউ চলে যাওয়ার পর আমি বিয়ে দিতে চাইনি। তার মায়ের পিড়াপিড়িতে বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের আগে ইউনিয়ন সচিবের মাধ্যমে সনদটি নিয়েছেন বলে জানান।
রানা মন্ডলের মা রেহেনা খাতুন রেনু বলেন, আমার ছেলের বিয়ে আমি দেব তাতে আপনাদের সমস্যা কোথায়। ছেলে বিয়ে করতে চাই বিয়ে দিয়েছি, এখানে বাইরের লোকের এত মাথা ব্যাথা কেন।
রানার সহপাঠি হৃদয় খান জানান, ‘রানা ও আমি এক সাথে পড়েছি। আমার এক বছরের বড় সে। আমি মাঝখানে মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ায় আমার এক বছর গ্যাপ রয়েছে। সেই হিসেবে রানা আমার এক বছরের বড় হতে পারে। আমার বয়স এখন ১৬ বছর চলছে।
রানার দূসম্পর্কের খালাত ভাই বলেন,‘২০০৯ সালে আমরা দুইজন ক্লাস টুতে পড়তাম। এরপর সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। আমি এ বছর এসএসসি পাশ করেছি।’
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আব্দুস সালাম বলেন,‘ আমার সময়ে এ কাজ হয়নি। আগের চেয়ারম্যানের সময় সনদ জালিয়াতি করে কাজটি করেছে রানার পরিবার। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বয়স না হওয়ায় ছেলেকে একাধিক বিয়ে দেওয়ায় রানার পিতা রাশেদ মন্ডলকে পুলিশ আটক করেছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে বহু বিবাহকারী রানা মন্ডল।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল আহমেদ বলেন,‘ বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। দেড় বছরে একটি ছেলে ৪টি বিয়ে করেছে, তার বয়স কুড়ির নিচে। খুবই গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। সনদ জালিয়াতি করলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার বাড়ি থেকে ছেলের বয়স ২১ বছরের বেশির কথা বলা হলেও কেন জাতীয় নাগরিক সনদ করেনি সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমার উপজেলার বাইরে সে ৩টি বিয়ে করেছে। আর একটি বিয়ে করেছে আমার উপজেলার মধ্যে।’