ধর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তান, প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুমের ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল যে, সে বড় হয়ে গল্পের কাল্পনিক চরিত্র ‘ মাসুদ রানা’ হবে।
কিন্তু তিনি জানতেন না, এই স্বপ্নই একদিন তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তার নাম কাইয়ুম হলেও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে মাসুদ রানা নামেই ডাকতো। কোটিপতি বাবার সন্তান এই প্রকৌশলী ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় বাস করতেন।
তার এই স্বপ্নের কথা জানতে পেরে একজন আত্মীয়ের প্রতিবেশী আঞ্জুমান তার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য, সরকারি উচ্চ পদে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসাবে চাকরির লোভ দেখিয়ে ২০ লাখ টাকার চুক্তিও করে।
এর মধ্যে ২০১৮ সালে ৯ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে মালয়েশিয়া চলে যায় আঞ্জুমান। কিন্তু সে এই ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে দেয়ার পরিকল্পনা করে।
যেভাবে এই হত্যা রহস্য উদঘাটন করে র্যাব
একটি হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই আঞ্জুমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গত ১৩ই মার্চ গাজীপুরের ন্যাশনাল পার্কের ভেতর থেকে একটি অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসিড মেরে ওই মৃতদেহের মুখ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, যাতে পরিচয় সনাক্ত করা না যায়।
পুলিশের পাশাপাশি ওই মামলাটির তদন্ত শুরু করে র্যাব।
তদন্তের একপর্যায়ে তারা ৮ই এপ্রিল গাজীপুরের চন্দ্রা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ আঞ্জুমানকে গ্রেপ্তার করে। এরপরেই ওই হত্যাকাণ্ডের জট খুলে যায়।
সংস্থাটি বলছে, ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই আব্দুল কাইয়ুমকে হত্যা করেছিলেন এই ব্যক্তি।
একটি বিবৃতি র্যাব পুরো ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেছে।
যেভাবে হত্যাকাণ্ড
র্যাব জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থান করার সময় আঞ্জুমান পরিকল্পনা করে যে, ৯ লাখ টাকা আর ফেরত দিতে না হলে কাইয়ুমকে মেরে ফেলতে হবে।
সেজন্য সে মালয়েশিয়ায় বসেই হত্যার পরিকল্পনা করতে শুরু করে। সেখান থেকেই তিনি ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে যোগাযোগ রাখবেন।
৪ঠা মার্চ তিনি গোপনে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এরপর সে কাইয়ুমকে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হতে হলে তাকে গভীর জঙ্গলে সাতদিন এবং মালয়েশিয়ায় সাতদিন থেকে ট্রেনিং করতে হবে।
এর সঙ্গে জড়ানো হয় খানিকটা প্রেমের গল্পও।
আব্দুল কাইয়ুম একটি মেয়েকে পছন্দ করতো।
আঞ্জুমান তাকে আশ্বাস দেন যে, ওই নারীকে পেতে সহায়তা করবে। ওই নারী তার স্বামীর সঙ্গে ন্যাশনাল পার্কে বেড়াতে আসবে, সে সময় তাকে অপহরণ করা হবে বলে সে পরিকল্পনার কথা জানান।
গত ৯ই মার্চ ‘মাসুদ রানা’ হওয়া আর কাঙ্ক্ষিত নারীকে পাওয়া স্বপ্নে বিভোর আব্দুল কাইয়ুমকে নিয়ে ন্যাশনাল পার্কে বেড়াতে আসে আঞ্জুমান।
গভীর বনের দিকে নিয়ে গিয়ে ছবি তোলার কথা বলে পেছন থেকে গলা চেপে ধরে হত্যা করে। কেউ যাতে চিনতে না পারে, এজন্য তার মুখে এসিড ঢেলে দিয়ে আসে।
র্যাব হেফাজতে থাকা মোঃ আঞ্জুমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
র্যাব জানিয়েছে, আঞ্জুমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।