যশোরকে মাদক মুক্ত করতে এবার পবিত্র কোরআন ও গীতা ছুঁয়ে শপথ নিয়েছেন জেলার ৬০ জন পুলিশ অফিসার। ব্যক্তি স্বার্থ ভুলে মাদক ব্যবসা ও মাদক ব্যবহার রোধে মহান আল্লাহর নামে এই শপথ নেন থানা, ডিবি, ডিএসবি, ফাঁড়ি, ক্যাম্প, তদন্ত কেন্দ্র ও ট্রাফিক বিভাগের অফিসারগন।
দুপুরে যশোরের পুলিশ সুপারের সভা কক্ষে সিনিয়র অফিসারদের উপস্থিতিতে এই নজিরবিহীন শপথ গ্রহন করেন অফিসারগন। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও জোরদার করতে পুলিশের এ কঠোর অবস্থান। শপথ নেয়ার পরও কোনো পুলিশ অফিসার মাদক ব্যবসায়ীর প্রতি কোনো প্রকার নমনীয়তা দেখালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে সিনিয়র অফিসারদের পক্ষে।
গত বছর প্রথম দফায় জেলার ৩০টি ইউনিয়ন মাদক মুক্ত করতে ১শ’ দিনের এবং দ্বিতীয় দফায় ৬৩ ইউনিয়নকে মাদক মুক্ত করতে ১শ’১ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করে যশোরের পুলিশ। চলে ‘ডোর টু ডোর’ অভিযান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মিডিয়া কর্মী, ধর্মীয় নেতা, সুশীল সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে সরকারের মাদক বিরোধী কার্যক্রমকে গতিবান করে। প্রথম দফার অভিযানে ৯ হাজার ১শ’৩৪ জন আটক ও ১হাজার ২৬ টি মামলা হয়। পরবর্তীতে ৬৩টি ইউনিয়নে মাদক প্রতিরোধ অভিযানের ৫৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সচেতনতার আওতায় আনা হয়। এছাড়া আটক ও উদ্ধার প্রশংসিত হয়।
ওই অভিযান শেষ হওয়ার কিছুদিন পার হতেই বিভিন্ন স্পটে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মাদক ব্যবসায়ীরা। এরপর প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারিভাবে মাদককে না বলতে এবং মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হুঁশিয়ারী দেয়া হলে যশোরের পুলিশ আরও জোরেসোরে মাঠে নামে। মাদক নির্মূলে জেলার সার্বিক চিত্র চোখে পড়ার মত পর্যায়ে পৌঁছায়। এরপরও পুলিশের অনেক অসাধু কর্মকর্তা মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা করে চলছেন, অনেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করছেন এমন নেতিবাচক তথ্য যশোর পুলিশের উপর মহলে যায়। এরপর ৮ জুলাই দুপুরে জেলা পুলিশের সকল উইনিটের প্রধান ও অফিসারগনকে নিয়ে জরুরী সভায় বসেন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বিপিএম পিপিএম বার। এসময় জেলার উর্ধŸতন অফিসারগন উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মুসলিম পুলিশ অফিসারগন পবিত্র কোরআন ও হিন্দু অফিসারগনকে পবিত্র গীতা ছুঁইয়ে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। তারা শপথ করেন ব্যক্তি স্বার্থ ভুলে দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় মাদক ব্যবসা ও মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি কঠোর মনোভাব পোষণ করবেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান গ্রামের কাগজকে জানান, মাদক ও মাদক বিক্রেতারা দেশ ও জাতির শত্রু। এই মাদক নির্মূলে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারতো বটেই, দেশ প্রেমিক সব নাগরিককে এগিয়ে আসা উচিত। তিনি আরও বলেন, শপথ নেয়ার পর যদি কোনো পুলিশ অফিসার মাদকের প্রতি শৈথিল্য প্রদর্শন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগেও মাদক সংক্রান্ত ব্যাপারে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ী কিংবা সেল্টারদাতা কারো রেহাই নেই।