সিয়াটল থেকে লেকের অপর পারে ছোট্ট শহর মেডিনা। এখানে থাকেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। এই শহরে গড়ে একটা বাড়ির দাম ২৮ লাখ ডলার।
মেডিনায় যারা থাকেন তারা এই গ্রহের সবচেয়ে ধনী কিছু মানুষ। বিশ্বের এই মুহূর্তের এক নম্বর ধনী মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং তার ঠিক পরেই দু নম্বরে থাকা আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস- দুজনেই এই শহরের বাসিন্দা।
ফোর্বসের হিসেবে তাদের দুজনের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার নয়শো কোটি ডলার।
কিন্তু তারপরও মেডিনা শহর আছে ভীষণ অর্থকষ্টে। পুলিশ বা এরকম আরও নানা রকমের পাবলিক সার্ভিস দিতে হিমশিম খাচ্ছেন শহরের পৌর কর্মকর্তারা। ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না অনেক অবকাঠামো।
কী অদ্ভূত বৈপরীত্য! মেডিনার প্রতিটি পরিবারের গড়পড়তা আয় এক লাখ ৮৬ হাজার ডলার। সিয়াটলে গড়পড়তা আয় হচ্ছে ৮০ হাজার। আর যুক্তরাষ্ট্রের পরিবার পিছু গড়পড়তা আয় আরও কম, ৬০ হাজার।
গড়পড়তা আয় বিবেচনায় নিলে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে মেডিনার পোস্ট কোড ধনী এলাকা হিসেবে সাত নম্বরে।
তালে মেডিনার পৌর কর্মকর্তারা কেন শহরটি পরিচালনা করতে গিয়ে এরকম অর্থসংকটে পড়েছেন?
লেক ওয়াশিংটনের তীরে বিশ্বের সবচেয়ে দামী এবং বিশাল সব প্রাসাদোপম বাড়ি।
বিল গেটসের বাড়িটাই এত বিশাল যে, এটির বর্ণনা নিয়ে উইকিপিডিয়ায় একটা আলাদা পাতাই রয়েছে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিল গেটসের বাড়িতে আছে ২৪ টি বাথরুম এবং একটি বিশাল অভ্যর্থনা হল। যেখানে এক সঙ্গে দুশো অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয়।
বাড়িটির দাম নাকি এখন বারো কোটি ৮০ লাখ ডলার।
কিন্তু বাসিন্দাদের অর্থবিত্ত যাই থাক, মেডিনার অর্থ সংকট দিনে দিনে তীব্র হচ্ছে। সামনের বছর নাগাদ তাদের বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে পাঁচ লাখ ডলারে। আগামী পাঁচ বছরে এটি ৩৩ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
আইন অনুযায়ী, পৌর কর্মকর্তারা চাইলেও এক শতাংশের বেশি কর বাড়াতে পারেন না। কাজেই গত ১৭ বছর ধরে তারা সঞ্চয়ের অর্থ খরচ করছিলেন ঘাটতি মেটাতে।
বাড়ির ওপর বসানো কর থেকে মেডিনা শহর কর্তৃপক্ষ বছরে পান ২৮ লাখ ডলারের মতো। এক শতাংশ কর বাড়িয়ে সেখান থেকে বাড়তি আসবে মাত্র ২৮ হাজার ডলার।
জরুরি স্বাস্থ্য সেবা, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন পার্ক এবং প্রাকৃতিক উদ্যান সংরক্ষণ, প্রশাসনিক খরচ- এতকিছুর জন্য এই অর্থ যথেষ্ট নয়।
পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের বাসিন্দাদের কাছে যে নিউজলেটার পাঠিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে:
“এরকম একটি শহর যে নানা রকম নাগরিক সুবিধা এবং সেবা চালু রাখার জন্য যথেষ্ট অর্থ আয় করতে পারছেন না, এটা কল্পনা করতেও হয়তো আপনার কষ্ট হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই শহরে বাড়ি-ঘরের দাম বাড়ছে, কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কর কিন্তু বাড়ছে না।”
কিন্তু এ মাসে মেডিনার কর্মকর্তারা তাদের শহরকে বাঁচাতে কিছু মরিয়া পদক্ষেপ নিয়েছেন। তারা বাড়ীঘরের ওপর নতুন কর ধার্য করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা আগামী ছয় বছরের জন্য কার্যকর হবে।
এই প্রস্তাব এ মাসের শুরুতে পাশ হয়েছে। যার ফলে এখন পৌর কর্মকর্তারা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন।
মেডিনার ধনী বাসিন্দাদের এখন যে বাড়তি কর দিতে হবে সেটা তাদের জন্য অতি সামান্য, কিন্তু এর ফলে পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের শহরের নাগরিক সুবিধা আর নানা রকম সেবা কোন কাটছাঁট ছাড়াই বজায় রাখতে পারবেন। বিবিসি বাংলা।
Discussion about this post