যশোরের মণিরামপুরকে বাল্যবিয়ে ও মাদকমুক্ত করতে মহতি উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার কোন এলাকার বাল্যবিয়ে ও মাদকসেবী বা কারবারির খবর দিলেই সংবাদ দাতার মোবাইলে ৫০ টাকা ফ্লেক্সিলোড দেওয়ার সিন্ধান্ত উপজেলা প্রশাসনের। বাল্যবিয়ে ও মাদকের ভয়াভয়তা রোধে এমন ঘোষণা দিয়েছেন মণিরামপুরে সদ্য ইউএনও হিসাবে যোগদানকারী মো. আহসান উল্লাহ শরিফী। এছাড়া ভিক্ষুক ধরে দিলে তাকেও ৫০ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। আর এই ক্ষেত্রে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি ০১৭৩৩-০৭৪০৩৯ নম্বরে কল করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে ।
এদিকে মণিরামপুরে যোগদানের পরেই পৌরশহরের দুইটি সরকারি হাইস্কুল পরিদর্শনে যান ইউএনও। প্রতিষ্ঠান দুটিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের অনুপস্থিতি তার চোখে পড়ে। এছাড়া মণিরামপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি শ্রেণিকক্ষে চক-ডাস্টার খুঁজে পাননি। ফলে এসব ব্যাপরে কঠোর ভূমিকা নিয়েছেন তিনি। কোন শিক্ষার্থী যৌক্তিক কারণ ছাড়া তিন দিন একটানা শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থাকলে তাকে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের উপজেলার অন্যকোন স্কুলে ভর্তি করাতে হলে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বিষয়টি ইউএনওকে জানাতে হবে।
ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন,‘প্রশাসন চাইলে বাল্যবিয়ে ও মাদক নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। আমি এই ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। ফলে বাল্যবিয়ে ও মাদকের সংবাদদাতাকে উৎসাহিত করতে আমার পক্ষ থেকে তার জন্য ৫০ টাকা ফ্লেক্সির ঘোষণা দিয়েছি। খবরের সতত্যা পাওয়া মাত্রই তার নম্বরে নির্ধারিত এমাউন্ট ঢুকে যাবে। আর মণিরামপুরের ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে বেশ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। তারপরও অনেকে ভিক্ষা করেন। এসব ভিক্ষুকদের ধরে জেলে দেওয়া হবে। কেউ ভিক্ষুক ধরে দিলে পারলে তাকে (যে ধরে দেবে) ৫০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘মণিরামপুরে যোগদানের পরপরই মণিরামপুর সরকারি বালক ও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়েছি। সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে ৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১০ জনকে উপস্থিত পেয়েছি। এসময় প্রতিষ্ঠানটির কোন শ্রেণিকক্ষে চক-ডাস্টার পাওয়া যায়নি। সরকারি বালিকা বিদ্যালয়েও অনেক শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত পাওয়া গেছে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা কেন ওই দিন স্কুলে আসেনি, সেই ব্যাপারে অভিভাবকদের কাছ থেকে লিখিত নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়ে গেছে।’
ইউএনও বলেন, ‘একটানা যদি কোন শিক্ষার্থী যোক্তিক কারণ ছাড়া স্কুলে অনুপস্থিত থাকে তাহলে তাকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হবে। এসব শিক্ষার্থীদের উপজেলার অন্য স্কুলে ভর্তি নেওয়ার ব্যাপারে ইউএনওকে জানাতে হবে।’ দ্রুত উপজেলার অন্যান্য স্কুলের প্রধানদের ডেকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান আহসান উল্লাহ শরিফী।
গত বৃহস্পতিবার (৯ আগষ্ট) মণিরামপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে যোগ দিয়েছেন আহসান উল্লাহ শরিফী। এরআগে তিনি মাগুরা জেলার শ্রীপুরে উপজেলা নির্বাহী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ইউএনও হিসাবে মণিরামপুর তার দ্বিতীয় কর্মস্থল। আহসান উল্লাহ শরিফীর বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায়।