মহান শহীদদের ত্যাগের মহিমায় যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে আগামী প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সফল করারও আহ্বান জানান তিনি।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৭তম বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা যুব সমাজ আছে তাদের আমি এইটুকুই বলব- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লাখো শহীদের যে ত্যাগ, সেই ত্যাগের মহিমায় নিজেদেরকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গড়ে তুলতে হবে বাংলাদেশকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিজয়ী জাতি এ কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে। এক মুহূর্তের জন্য ভুললে চলবে না। আমরা কারও কাছে মাথা নত করি না। আমরা বিশ্বে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলব। এটাই হোক আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যুব সমাজ আজ উদ্বুদ্ধ হয়েছে, আজ তারা এই উৎসব পালন করার সুযোগ পাচ্ছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলেও তাঁরা তখনো ধানমন্ডির ১৮ নম্বরের একটি বাড়িতে বন্দী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাঁর মা, ছোট বোন, ভাইসহ সবাইকে ওই বাড়িতে বন্দী করে রাখা হয়। শেখ কামাল আগেই মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। আর শেখ জামাল তাঁদের সঙ্গে বন্দিদশা থেকে গেরিলা কায়দায় পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট হত্যার পর এ দেশে ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি। তাই বাংলার মানুষকে আমি অভিনন্দন জানাই, সালাম জানাই। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেসকো তাদের ওয়ার্ল্ড মেমোরি রেজিস্ট্রারে বিশ্বের অনন্য দলিল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে স্বীকৃতি দেওয়ায় সমগ্র বিশ্বে জাতি হিসেবে বাঙালি সম্মানিত হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছি, তাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্বে আজ বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। যেভাবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের পরে মর্যাদা পেয়েছিলাম, সে মর্যাদা লুণ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট। আজকে সে মর্যাদা আমরা আবার ফিরে পেয়েছি। আজকে সারা বিশ্ব বাঙালির দিকে তাকিয়ে থাকে। কাজেই এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আর যেন কোনো অন্যায় অবিচার বাংলার মানুষের ওপর না হয়। দেশের মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন।