কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুরের রাজিনাথপুরের শেখ মোঃ শহীদুল্লাহ। তিনি বঙ্গবন্ধুর অতিস্নেহ ভাজন ও কাছের একজন আওয়ামীলীগকর্মী। স্বাধীনতার পর থেকেই ৩২ নং ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে বেশী সময় কাটিয়েছেন শেখ মোঃ শহীদুল্লাহ। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সন্তান সজিব ওয়াজেদ জয়কে কোলে নিয়েছেন।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু নিজে খাদ্য মন্ত্রনালয়ে চাকুরী দিয়েছেন শহীদুল্লাহকে। খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে ২০০৮ সালে অবসর গ্রহন করেন তিনি। অবসরের পর পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০০৯ সালে ল্যাব এইডের ভুল অপারেশনে তার প্রসাব ও পায়খানার নার্ভ দু’টি কাটা পড়লে শারীরিকভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেন এই কর্মবীর। মূমূর্ষ অবস্থায় ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার আবারও ভুল অপারেশন করলে তার শরীরের আরও অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারতের চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দেন তার যে ক্ষতি হয়েছে তা আর উঠে আসবে না। বিধায় তারা দেশে পাঠিয়ে দেন।
তার সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থ ও তার ছেলে-মেয়েদের উপার্জিত মোট ২১ লক্ষ টাকা ব্যয় চিকিৎসার জন্য। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উপরন্তু তিনি শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েন। এখন তিনি খুবই অসুস্থ ও অসহায়। আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য চিকিৎসাসহ জীবনের ব্যয়ভার চালানোর ক্ষেত্রে পুরো অক্ষম হয়ে শুধূ দু’চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। বঙ্গবন্ধুর কথা বললইে ডুকরে কেঁদে উঠেনে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে আজ তিনি বড় একাকী সময় পার করছেন। তিনি স্ত্রীকে হারিয়েছেন অল্প বয়সেই। চাকুরী জীবনের সততা আর নিষ্ঠার কথা মানুষের মুখে মুখে। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া চাকুরীতে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি হলে তাতে বঙ্গবন্ধুকে ছোট করা হবে, অপমানিত করা হবে। তোমরা আর যাই কর বঙ্গবন্ধুকে ছোট করা যাবে না।
তার অসহায়ত্ব নিয়ে টেলিভিশনে প্রতিবেদন প্রচার হয়েছে। শেখ মোঃ শহীদুল্লাহ একাত্তরের রণাঙ্গনের একজন সম্মুখযোদ্ধা। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আক্ষেপের কারণে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রমাণাদি থাকা সত্বেও মুক্তিযোদ্ধার জন্য আর আবেদন করেননি। যে দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় সেদেশে মুক্তিযোদ্ধর পরিচয় দিয়ে কি হবে? এই অভিমান থেকে আবেদন করেননি। তবে বর্তমানে বঙ্গবন্ধুরকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠাতে আগ্রহী তিনি। জীবনের শেষ দিনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার কথা ভাবছেন। আর ভাবছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা যদি তার এই দুর্দশার কথা জানতেন তাহলে নিশ্চয় সহযোগিতার হাত এগিয়ে দিবেন এই প্রত্যাশা মৃত্যুপথযাত্রী শহীদুল্লাহ ও তার পরিবারের। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা ছাড়া তার আর নেই কোন সম্বল। গণমাধ্যম কিংবা সহৃদয় ব্যক্তি যদি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন কুষ্টিয়ার শহীদুল্লাহ তিনি চিনবেন। এই তার দৃঢ় বিশ্বাস।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কে আছে আজ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ সহচর শেখ মোঃ শহীদুল্লাহর পাশে দাঁড়াবে? বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য দৌহিত্র সজিব ওয়াজেদ জয়কে অনেকবার কোলে নেওয়ার স্মৃতি এখনও বিস্মৃতির অতল গহবরে তলিয়ে যায়নি মৃত্যুপথযাত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শহীদুল্লাহ’র মানসপট থেকে।