খুলনা নগরীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে সোমবার ইনসান মোল্যা (২৬) নামে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার প্রেমিকাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে নড়াইলের লাঙ্গুলিয়া গ্রাম থেকে নিহতের প্রেমিকা মরিয়ম ওরফে তানিয়া খাতুনকে আটক করে কালিয়া থানা পুলিশ। পরে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে খুলনা সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হত্যার রহস্য উন্মোচনে পুলিশ তাকে খুলনায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। নিহত ইনসান নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের ইঞ্জিল মোল্যার ছেলে। এ ঘটনায় আটক প্রেমিকাকে আসামি করে খুলনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহতের ভাই চাঁচুড়ী ইউপি সদস্য তৌরুত মোল্যা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে তার ভাই চাঁচুড়ী বাজারে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে শুক্রবার রাত আনুমানিক ১০টায় কালিয়া থানায় এ ব্যাপারে তার বোন আরিফা বেগম একটি জিডি করেন। এরপর সোমবার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে একটি অপরিচিত মুঠোফোন নম্বর থেকে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল করে ইনসানের মুক্তির জন্য ৬০ হাজার টাকা দাবি করা হয়।
মুক্তিপণ দাবিকারীদের কথামত তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাকালে সোমবার বিকেলে খুলনায় কর্মরত তার গ্রামের এক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে হোটেল আজমল প্লাজায় (পিকচার প্যালেস মোড়) একটি অজ্ঞাত লাশ পাওয়ার খবর পান। তিনি সেখানে গিয়ে ভাই ইনসানের লাশ সনাক্ত করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার লাঙ্গুলিয়া গ্রামের আবুল কালাম বিশ্বাসের মেয়ে মরিয়ম খাতুন গত বছর ১১ ডিসেম্বর নিহত ইনসান মোল্যাকে স্বামী দাবি করে কালিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ইনসানের সঙ্গে মরিয়ম খাতুনের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক বিদ্যমান। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নোটারী পাবলিকের অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
এরপর একই বছর ২ অক্টোবর ভারতে গিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করেন। কিন্তু গ্রামে ফিরে এসে ইনসান তাকে স্ত্রী’র মর্যাদা না দিয়ে গত বছর ২২ নভেম্বর পারিবারিকভাবে অন্যত্র বিয়ে করেন। এরপর ১১ ডিসেম্বর ইনসান মোল্যাকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করলে তিনি কারাভোগের পর সম্প্রতি জামিনে বের হন।
ইনসান মোল্যা জামিনে আসার পর এই মামলা থেকে রক্ষা পেতে একটি দুষ্টু চক্রের মাধ্যমে মরিয়ম খাতুনকে পুনরায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইনসান তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যার সূত্র ধরে তাকে নিয়ে খুলনার হোটেলে ওঠে।
কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ শমসের আলী জানান, কালিয়া থেকে নিখোঁজ যুবকের লাশ উদ্ধার ঘটনায় নিহতের ভাই তৌরুত মোল্যা বাদি হয়ে খুলনা সদর থানায় মরিয়মের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এ মামলায় মরিয়ম খাতুনকে আটকের পর খুলনা সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়স্থ হোটেল আজমল প্লাজার পঞ্চম তলার ৫০২ নম্বর কক্ষ থেকে সোমবার বিকেলে পুলিশ ইনসান মোল্লার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
হোটেলের সূত্র জানান, দুই তরুণ-তরুণী স্বল্প সময় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য হোটেলে ওঠেন। যে কারণে তাদের নাম-ঠিকানা রাখা হয়নি। কিন্তু তারা আর দরজা না খোলায় সন্দেহ দেখা দেয়। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে সোমবার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। নিহত যুবকের দুই হাত ও দুই পা বাঁধা এবং মুখ ও পুরুষাঙ্গ আগুনে ঝলসে দেওয়া ছিল। ঘটনার পর প্রেমিকা পালিয়ে যায়।