কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দলটির ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার কালেক্টরেট চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে¢ ফুল দেওয়ার সময় তাঁদের আটক করা হয়।
বিকেল চারটায় পুলিশকে খুন করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ ও হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে নেতাকর্মিদের কারাগারে পাঠানো হয়। মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী মেহেদী হাসান বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার কুন্ডুসহ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদ রুমী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দীন, শহর বিএনপির সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম বিশ^াস, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এমএ শামীম আরজু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাউর রহমান পিন্টু, রবিউল ইসলাম পলাশ, এসএম আতাউল গণি ওসমান, আলমগীর হোসেন, নাজমুল ইসলাম, কর্মি ফরহাদ হোসেন, সজিব হোসেন ও শাহরিয়ার আল মামুন।
বিএনপি দলীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বেলা ১১টার দিকে শহরের মজমপুর এলাকা থেকে স্বাধীনতা দিবসের একটি র্যালী নিয়ে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মিরা কালেক্টরেট চত্বরে যায়। সেখানে কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেবার পর নেতাকর্মিরা নামছিলেন। এসময় পুলিশ নেতাকর্মিদের আটক করে থানায় নেয়। কেউ কেউ দৌড়ে পালিয়ে যান।
কাজী মেহেদী হাসানের দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্র বলছে, তিনিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। সাড়ে ১১টার দিকে কালেক্টরেট চত্বরের দ্বিতীয় ফটকের সামনে বিএনপির একটি মিছিল দেখতে পান। মিছিল থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, অবৈধ সরকার মানি না মানবো শ্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ভাঙ্চুর চালায়। সেখানে পুলিশ গেলে তারা বাঁশের লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে খুন করার উদ্দেশ্যে পুলিশকে আক্রমণ করে। এতে পুলিশের কর্মকর্তাসহ কয়েকজন আহত হয়। পুলিশ বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১২জনকে আটক করে থানায় নেয়। এসময় সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদের দেহ তল্লাশী করে লাইসেন্সকৃত একটি পিস্তল ও ১৮ রাউন্ড গুলি জব্দ করে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন বলেন, গাড়ি ভাঙ্চুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মিদের আটক করা হয়েছে। ১২ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ কে আসামী করে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলেই আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মজমপুর এলাকা থেকে একটি র্যালি মহাসড়ক দিয়ে কালেক্টরেট চত্বরে গিয়ে ফুল দেয়। এরপরই পুলিশ তাদের আটক করে। দৌড়ে নেতাকর্মিদের ধরতে গিয়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্য পড়ে আহত হয়। সেখানে কোন গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। এমন খবরও কেউ পাননি।
কুষ্টিয়া মডেল থানায় হাজতখানার বারান্দায় দাঁড়িয়ে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নিজে মুক্তিযোদ্ধা। নেতাকর্মিদের সাথে নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেবার পর পুলিশ অন্যায়ভাবে আটক করে। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা দিবসে এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।’