আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে যশোরাঞ্চলে গোয়েন্দা তদন্ত
যশোরাঞ্চলে ক্ষমতাসীন দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক এমন অর্ধশত নেতার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে মাঠে কাজ করছে একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা। ইতিমধ্যে ওইসব নেতার ব্যাপারে প্রাথমিক একটি প্রতিবেদনও সরকারের উপর মহলে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নেতার এলাকায় জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক তৎপরতা, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদ, সন্ত্রাসী তৎপরতায় সংশ্লিষ্টতা, মাদক সম্পৃক্ততা ও মামলা মকদ্দমা খতিয়ে দেখছে সংস্থাটি।
বিতর্কিত কোনো নেতা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন সে জন্য ওই সংস্থাটি তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। সংসদ সদস্যরা শপথ নেয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত থাকে নির্বাচিত সংসদের মেয়াদ। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি বর্তমান সরকার গঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের সাথে সংলাপও করেছে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনের হাওয়া যশোরেও পড়েছে জোরেসোরে।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশের মত যশোরের ৬টি সংসদীয় এলাকায় নেতারা এখন ব্যস্ত। দেশের নিবন্ধিত দলগুলোর যশোরাঞ্চলের নেতারা কেন্দ্রের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করাসহ তৃণমূল ঢেলে সাজাচ্ছেন। নেতা কর্মীর সাথে নানামুখি সংলাপ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই তালিকায় যশোরের ৮ উপজেলার ৬টি সংসদীয় এলাকায় আওয়ায়ী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপ, জাতীয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতারা রয়েছেন। রয়েছেন ২০ দলীয় ও ১৪ দলীয় জোটের আরও কয়েকজন। সব মিলিয়ে যশোরে ৬ সংসদীয় এলাকায় মাঠ চষছেন ৩০/৪০ জন নেতা।
কয়েকটি দল এ অঞ্চলে গণসংযোগ, মেম্বারশিপ ক্যাম্পেইন, পার্টির নতুন সদস্য সংগ্রহ করেছে। তবে আগামী নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে কেমন ব্যক্তি ও নেতা গুরুত্ব পাবেন, কোন প্রার্থী সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন কোন প্রার্থী বিজয় আনতে পারবেন এ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরী করছে ওই সংস্থাটি।
শার্শা ১ আসন, ঝিকরগাছা-চৌগাছা ২ আসন, যশোর সদর ৩ আসন, বাঘারপাড়া-অভয়নগর ৪ আসন, মণিরামপুর ৫ আসন ও কেশবপুর ৬ সংসদীয় এলাকায় মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল কয়েক ডজন অফিসার। তারা আদালত ও থানার মামলা, বিভিন্ন পত্রিকার নিউজ কাটিং, বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগ অনুযোগ, সংশ্লিষ্ট নেতার অতীত প্রতিবেদনের আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া নেতাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। দল ক্ষমতায় আসার আগে কোন নেতার কী পরিমাণ সম্পদ ছিল এবং এখন নামে-বেনামে কার কতো সম্পদ হয়েছে তাও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয় ও নির্বাচনে বিজয় আনতে পারবে এমন নেতাদের তালিকাও তৈরী করছেন তারা। মাদক ও সন্ত্রাস সংশ্লিষ্ট নেতাদের বয়কট করা যাবে এ প্রতিবেদনে গুরুত্ব দিলে।
এছাড়া শুধু ক্ষমতাসীন দলীয় নয়, নিবন্ধিত দলের নেতাদের বর্তমান হাল হকিতক ও অবস্থান নিয়েও তথ্য প্রতিবেদন তৈরী করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে যশোরাঞ্চলের ডজন তিনেক নেতার ব্যাপারে প্রতিবেদন সরকারের উপর মহলে পাঠানো হয়েছে। আরও কাজ চলছে। প্রার্থী বাছাইয়ে সংস্থার পাঠানো বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত কাজে আসবে বলেও ওই কর্মকর্তার দাবি।