কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে স্থানীয় এমপির নির্দেশ অমান্য করে ফের দুর্নীতি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার এই দুর্নীতির চিত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে তুলকালাম সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েন দুর্নীতিগ্রস্তরা। পরবর্তীতে আর কোনো দিন দুর্নীতি না করার অঙ্গীকার করায় জনরোষ থেকে রক্ষা পান তারা।
এই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল নানা অনিয়ম দুর্নীতি। এতে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য আসা জনসাধারণ পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন অফিসটির দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও দলিল লেখক সিন্ডিকেটের কাছে। এই দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে বারবার খবর প্রকাশ হলেও কিছুতেই তা বন্ধ হচ্ছিল না। এমন প্রেক্ষাপটে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে অ্যাডভোকেট সরওয়ার জাহান বাদশাহ সর্বপ্রথম এই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সব ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধের পদক্ষেপ নেন।
এমপি বাদশাহ’র কঠোর নির্দেশে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় সেখানে যুগ যুগ ধরে চলে আসা দুর্নীতির মচ্ছব। এতে ভুক্তভোগী মানুষের মধ্যে ফিরে আসে স্বস্তি। সব মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হন সংসদ সদস্য আ. কা. ম অ্যাডভোকেট সরওয়ার জাহান বাদশাহ। এমপি নির্বাচিত হয়েই উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হলে দেশজুড়ে ইতিবাচক আলোচনায় উঠে আসেন সরওয়ার জাহান বাদশাহ।
অফিসটির যুগ যুগের অনিয়ম দুর্নীতির জঞ্জাল পরিষ্কার করতে সক্ষম হওয়ায় দেশের প্রথম সারির বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশোতেও ডাক পড়ে এমপি বাদশাহ’র। গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতি বিরোধী কঠোর অবস্থান বাস্তবায়নে কাজ করে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে গত কয়েক মাস মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় এই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল রেজিস্ট্রির কাজ চলে আসলেও এমপি সরওয়ার জাহান বাদশাহ’র নির্দেশ অমান্য করে গত তিন দিন আগে পুনরায় দুর্নীতি শুরু হয়। সেখানকার বড় বাবু হিসাবে পরিচিত হেডক্লার্ক আল আমিন, দলিল লেখক সিন্ডিকেটের নেতা নজরুল ইসলাম ও এমপি বাদশাহ’র বাড়ির এলাকার দলিল লেখক আব্দুল মোমিন যোগসাজশ করে দলিল প্রতি সরকারি খরচের দ্বিগুণ টাকা গোপনে আদায় করতে থাকেন।
ফের দলিল রেজিস্ট্রিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ঘটনা মঙ্গলবার দুপুরে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তোপের মুখে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। এমপির নির্দেশ উপেক্ষা করে নতুন করে দুর্নীতি শুরু করায় উপজেলা পরিষদ এলাকার লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ঘেরাও করেন। বিকালে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
সাব-রেজিস্ট্রার বিলকিস আরা, হেডক্লার্ক আল আমিনসহ অফিসের সবাই সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ সময় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তারা এই দুর্নীতির কথা স্বীকার করে ক্ষমা চান এবং পরবর্তীতে আর কোনো দিন দুর্নীতিতে জড়াবেন না বলে অঙ্গীকার করে জনরোষের কবল থেকে রক্ষা পান।
এদিকে উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে দীর্ঘ সময় ধরে তুলকালামকাণ্ড ঘটে গেলেও এ নিয়ে ইউএনও শারমিন আক্তারের কোনো ভূমিকাই লক্ষ্য করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সরওয়ার জাহান বাদশাহ’র কঠোর নির্দেশে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কয়েক মাস আগে অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ হলেও সংশ্লিষ্ট দলিল লেখকরা নানা কৌশলে জমি রেজিস্ট্রির জন্য আসা লোকজনের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এস আর সেলিম, দৌলতপুর