লেখকঃ “এম এইচ নীলয়”
পর্ব-৩
রুমের দৃশ্য দেখে সাদিয়ার চোখ কপালে উঠে যায়! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না, এটা কি করে সম্ভব? তবে কি something is missing??
পরেরদিন সকাল ১০ টা, গোয়েন্দা অফিস বসে সাদিয়া কান্না করেই চলছে! টিস্যু বক্স থেকে একের পর এক টিস্যু নিয়ে চোখের ও নাকের পানি মুছতে মুছতে “use me” ভারাট করে ফেলছে! তবুও যেন কান্না থামার লক্ষণ নেই!!
সাদিয়ার এ অবস্থা দেখে, Intelligent Chief শুভন প্রথমে কড়া দুই ধমক দিলেও.. পরে নিজের ভুল বুঝতে পারে। কারণ সাদিয়ার হাত দিয়ে প্রায় শ’খানেক কেইস সমাধান করা হয়েছে কিন্তু এর অাগে কখনো এমন shocked ও বিধ্বস্ত চেহেরা ওর দেখা যায়নি! তারমানে ও বড়ধরণের কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। তাই সব কিছু ওর মুখ থেকে শুনার অাগে, সাদিয়াকে self control এর জন্য waiting room এ বসিয়ে রেখে, যাঁর-যাঁর মত নিজস্ব কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে!!
এ ঘটনার ঘন্টাখানেক পরে সাদিয়া নিখোঁজ! নিখোঁজ তো নিখোঁজ, Cell phone, facebook, viber, Whatsapp, এমনকি ওর বাসায় লোক পাঠিয়েও কোন খোঁজ পাওয়া গেলো না(বাহির থেকে দরজা লক করা)! কোথাও খুঁজে না পেয়ে, অাচমকা একটা ভয়ানক বিপদ সংকেতের অাভাস দেখতে পেল বাকি এজেন্টরা!
বিকাল ৫ টা, শায়লা বেগম অফিসে একজন ষাটোর্ধ ভদ্রলোককে প্যান্ট, স্যুট-টাই পরিহিত অবস্থায় বসতে থাকা দেখা গেলো! মুখে কিঞ্চিৎ চিন্তার রেখা বিদ্যমান! অফিসের ভিতরে অার কেউ নেই, ওনি একা বসে ধীরে ধীরে চা খাচ্ছেন!
মিনিট পাঁচেক পর শায়লা বেগম প্রবেশ করলেন! লোকটির দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে অাতকে উঠলেন! এমন অপরিচিত অাজিব লোকটিকে কখনো দেখেননি, অাবার ওনারই অনুপস্থিতি তাঁর অফিসে বসে নির্লিপ্তভাবে চা খাচ্ছেন! কি সব ঘটছে? অফিসের সিকিউরিটি ও অন্যাণ্য ইনচার্জদের উপর রাগে ফুসলে উঠলেন!
পিয়নকে ডাকার জন্য কলিং বেলের উপর যেন চেপে বসলেন! ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই পিয়ন অাবুল মিয়া হাসতে হাসতে ভিতরে ঢুকলো, অার সাতপাঁচ না দেখে- না ভেবেই বললঃ
— ম্যাডাম, কি দিব? ঠান্ডা নাকি গরম??
—- (দাঁতে দাঁত চেপে) তোর মাথা! তোরা কৈ থাকিস? বেল বাজালে অাধঘন্টা লাগে অাসতে??
— ম্যাডাম অামিতো…..
—– (কথা কেড়ে নিয়ে) অাবার বেয়াদবের মত তর্ক করিস! কাকে কোথায় বসাতে হয় সেটাও তো ভুলে গেছিস? ওনাকে waiting room এ নিয়ে বসা অার দেখ, কার কাছে এসেছে??
অাবুল মিয়া এবার সত্যিই অাবুল হয়ে গেলো! ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে খুক খুক করে বললঃ
–ম্যাডাম অাপনিই ফোন করে বললেন, রইসুল সাহেবকে অাপনার অফিসে বসাতে!!
—- রইসুল সাহেব!?
কথাটা বলেই, শায়লা বেগম জিহ্বাতে কামড় দিয়ে দিলেন। গোয়েন্দারা মানুষ নাকি এলিয়েন? কি করে শুভন সাহেবকে চিনবেন? ৩০ বছরের স্মার্ট, সুদর্শন ছেলেটি, এখন ষাটোর্ধ বুড়া চাচা, চামড়াতে ভাঁজ ধরে গেছে.. অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললঃ
—- অাবুল, Sorry ভাই! কাজের চাপে একদম ভুলে গেছিলাম! অাচ্ছা তুমি যাও, প্রোয়োজন হলে ডাকব। অার কেউ ভিতরে অাসতে চাইলে, বলবে ম্যাডাম জরুরী মিটিং করছেন।
অাবুল মিয়া, পানসে মুখে অাবার সূর্য মার্কা হাসি হেসে বললঃ
— “জ্বী, অাইচ্ছা ম্যাডাম!”
কথাটি বলেই বেরিয়ে চলে যায় অার তৎক্ষনাৎ “Auto Door” অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়। তারপর শুভন সাহেব মুচকি হেসে রসিকতা করে বললেনঃ
— ম্যাডাম অাপনার চোখতো মনের কথা বলেনা, এই দৃষ্টি দিয়ে কি করে কয়েকশো কোটি টাকার ব্যবসা সামলাচ্ছেন??
—- ভাই, অার লজ্জা দিবেন না please. অার যে গেটঅাপ নিয়ে অাসছেন, কার সাধ্য অাছে recovery করবে??
— ম্যাডাম এ লাইনে এমনই সব কার্যক্রম, এত সিক্রেট ভাবে চলার পরো বিপদের শেষ নেই! অামার এজেন্টরা কোথাও না কোথাও অাটকে যাচ্ছে, accident হয়ে যাচ্ছেই, যেমন সাদিয়া…. (বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন)
—– সাদিয়া!?
নামটা উচ্চারণ করে, শায়লা বেগমো বিস্মিত হয়ে কেঁপে উঠলেন! মনে হলো, এমনকিছু ঘটতে পারে পূর্বেই অাঁচ করতে পারছিলেন!
— জ্বী সাদিয়া, অাপনার বাসা থেকে ফিরে এসেই.. অামার সব থেকে সাহসী ও দক্ষ এজেন্ট নিখোঁজ! ভাবা যায় এটা?
শায়লা বেগমের বলার বোধ শক্তি হারিয়ে গেল, চোয়াল ঝুলে যাওয়ার পরিস্থিতি! কোন রকমে থতমত খেয়ে বললঃ
—- এটা কি করে সম্ভব??
— সেটাতো অাপনি বলবেন? কি এমন ঘটেছিলো গত রাতে, যাঁর দরুন এ ঘটনা?? (সর্প শীতল কন্ঠে বলল)
—- সত্যিই বড্ড চিন্তার বেপার, কিন্তু এমন কিছু যে ঘটবে ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি??
— Ok. no problem, ওসব অামি সব বুঝে নিব, এখন অাপনি শুধু বলুন গত রাতে কি ঘটেছিল??
—– (একটু ইতস্তত ও লজ্জিত ভাবে) এর অাগে এমনটি কখনো হয়নি , যেটা গত রাতে হয়েছিলো? সাদিয়া অামাকে বলেছিলো, “অামি যেন জেসিয়াকে গল্পের মাধ্যমে অাটকিয়ে রাখি, পরবর্তী দিক নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত”! তো জেসিয়া মেসেজ দিচ্ছে, গল্প চলছে! গল্প চলছে মেসেজ দিচ্ছে, তারপর কিছুই মনে নেই।
যখন ঘুম ভাঙে, তখন সময় ৬ টা! চোখ মেলে দেখি জেসিয়া অামাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে অাছে, অার অামার শরীর শুধু চাদর দিয়ে ঢাকা! অামি অন্য কিছু খেয়াল না করেই জেসিয়াকে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়….(এটুকু বলেই শায়লা বেগম absent mind এ চুপ হয়ে যান, যেন কোথাও হারিয়ে গেলেন)
— (অতি অাগ্রহের সহিত তাড়া দিয়ে) তাহলে কি জেসিয়ায় এসব করতো??
—- (ধম নিয়ে অাবার শুরু করলেন) কিন্তু অাশ্চার্য্য অামার চড় খেয়েও, জেসিয়া দিব্যি ঘুমাচ্ছিলো। অামি ওকে অাবার ধাক্কা দেয়, ওঔ জাস্ট সাইড চেঞ্জ করে ঘুমাতেই থাকে। অামি সংবিৎ ফিরে খেয়াল করলাম অাজ ধর্ষণের শিকার হয়নি, কাল যে অবস্থায় মেসেজ নিচ্ছিলাম সেই অবস্থাতেই অাছি।
— তাহলে……??
—– অামারো এমন প্রশ্ন মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছিলো, পরে ভাবলাম মেয়েটির হয়তো ঘুম বেশি তাই কাল রাতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো!
যাহোক washroom যাবার জন্য বিছানা ছেড়ে নীচে নামছি অার electric shocked……
— ইলেকট্রিক শকড..??
—– হুমম ইলেক্টিক শকটেও এতটা বিধ্বস্ত হতাম না, যতটা হয়েছিলাম ফ্লোরের উপরে মেয়েদের personal short dress(অন্তর্বাস) দেখে, যে গুলো অামার ছিলো না! এমনকি ঐটার আশেপাশে সীমেন(semen) পড়ে ছিল! (বলেই লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন)
— (একটু তোতলানো কন্ঠে) কি, কি বলছেন এসব? কি ঘটেছিলো তবে??
—- অামি জানি না! তবে এটা বুঝতে পারছিলাম, কেউ একজন অামার বেডরুমের ফ্লোরে ধর্ষণের শিকার হয়েছে!
— কি অাশ্চার্য্য?! জেসিয়া নয়তো??
—- অামিও প্রথমে তাই ভেবেছিলাম, কিন্তু ঘুমের মধ্যেই ওর বডি চেক করে নিরাশ হয়! কারণ ওর মধ্যে কোন চিহ্ন ছিলো না!
— তবে সাদিয়া! সাদিয়া নয়তো??
—- এটা জানা/দেখার জন্য ওর বেডরুমে চলে যায় কিন্তু অাশ্চার্য্যের বেপার ছিলো “রুমশূণ্য”!! অামি হাঁকডাক দেয় কোন সাড়া নাই, পরে বাহির হয়ে লক্ষ্য করি মেইন দরজা খোলা!
— মেইন দরজা খোলা??
—- হুমম! বাড়ির বাহিরে, অাশেপাশে সব জায়গাতেই খোঁজ নিলাম কিন্তু রেজাল্ট শূণ্য! পরে গেজ করলাম হয়তো অফিসিয়াল কাজে বের হয়েছে, তাই চুপ হয়ে নিজেদের মত কাজ করতে থাকি!
— যতই সময় যাচ্ছে, কেইসটা ততই জটিল হয়ে যাচ্ছে!
তারপর হালকা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা বলে, শুভন সাহেব বিদায় নেন! শায়লা বেগমের স্তম্ভিত হয়ে বসেই রইলো! ভেবেই পাচ্ছেন না কি হচ্ছে অার কি ঘটতে চলছে??
সাদিয়ার নিখোঁজ হওয়াটা ও অন্তর্বাস-সীমেন (semen) কেইস বারবার শুভনের মাথাতে ঘোরে বেড়াচ্ছে! তবে কি ওর সাথেই খারাপ কিছু ঘটেছে?? না সেটা কি করে হয়??
তাছাড়া সাদিয়ার লাগানো ডিভাইস(cc cam) Active অাছে কিনা চেক দেয়া দরকার, হয়তো ওখান থেকে কিছু একটা তথ্য পাওয়া যেতে পারে?? কিন্তু মেয়েটির দেখা না পেলে কি করে সম্ভব? কেননা অনেক চেষ্টা করেও ডিভাইস এর কানেকশন পাওয়া যাচ্ছে না!
উপায়ন্তর না পেয়ে, শুভন অারো দুজন এজেন্ট নিয়োগ দিলো শায়লা বেগমের বাসার দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য! ওরা বাসার বাহির থেকে observe করবে, সারাদিন কে কে বাসার ভিতরে যায় অার কতক্ষণ অপেক্ষা করে বের হয়? অার বিশেষ করে রাতের বেলা, কেউ ভিতরে যাচ্ছে কিনা??
রাত ১১ টা, শায়লা বেগম বেডরুমে একা বসে হাজার রকম ভাবছেন! জেসিয়া oil নিয়ে অাসছিলো, কিন্তু উনি অাজ নিস্প্রভ তাই মেয়েটি কথা না বড়িয়ে চলে যায়।
তারপর কখন ঘুমিয়ে গেছেন মনে নেই, যখন ঘুম ভাঙে ঘড়িতে সময় সকাল ৫.৩০। উঠেই নিজের বডি চেক করেন দ্রুত, না অাজ ধর্ষণের শিকার হননি। খুশি হবেন নাকি ম্লান হবেন বুঝতে পারলেন না, তবে একটু বিচলিত মনে হলো।
দুপুর ২ টা, শুভনের অফিসে বসে কথা বলছেন শায়লা বেগম। গতরাতের ব্যাতিক্রম ঘটনা এবং এভাবে হুটহাট ঘুমিয়ে পড়া সহ নানান বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে!!
— ম্যাডাম, অাপনাদের ঘুম কি হুট করেই বেড়ে গেছে নাকি অাগেও এমন করে ঘুমাতেন??
—- কেন বলুনতো??
— অনেক চিন্তাভাবনা করে দেখলাম, হয়তো অাপনার বাসার খাবার সামগ্রী যেমন পানি, শরবত, চা, কফি এমন সব অাইটেমে ঘুমের ঔষধ মিক্সড করা হচ্ছে!!
—- অাপনি এভাবে বলবেন না please. কারণ অাপনার এমন কথা শুনে অামারই গলা শুকিয়ে অাসতেছে!
— হুম বুঝতে পারছি, কিন্তু ম্যাডাম পরিস্থিতিটাতো বুঝতে হবে অাপনাকে! এই মুহূর্তে অাপনাকেই শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর কোন প্রভাব না পড়ে!!
—- ঠিক অাছে!!
তারপর শুভন হুট করেই এমন একটা কথা বলল, শায়লা বেগমের হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম.. যেন কানের ভিতরে বোমা ব্রাস্ট হলো…
— ম্যাডাম, অাপনার মেয়েদের কি কখনো জিজ্ঞেস করছেন অথবা খোঁজ নিয়েছেন “ওরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে কিনা??
চলবে …………… পর্ব-৪
Discussion about this post