সিসি ক্যামেরায় চোরের মুখমণ্ডল ও পোশাক পরিচ্ছদ দেখা যাচ্ছে স্পষ্টভাবে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা ও ভিডিও ফুটেজও জমা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তবুও কোনো আসামিকেই গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীরা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস দ্রুত আসামি গ্রেফতারের আশ্বাস দিলেও তদন্ত কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাবেই আসামিরা গ্রেফতার হচ্ছে না এখন এমনটিই মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়া জোড়া পুকুর এলাকায় অবস্থিত এআর অটো। গত ৫ জুন দুধর্ষ চুরি হয় এ প্রতিষ্ঠানে। কয়েক মিনিটের মধ্যে চোররা ট্রাক নিয়ে দোকানের প্রায় ৮-১০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে চম্পট দেয়। সিসি ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সব। কিন্তু ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো চোর ধরা পড়েনি। উদ্ধার হয়নি মালামালও।
দোকান মালিক আক্তার হতাশা প্রকাশ করে বলেন, চোরেদের মুখমণ্ডল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তারপরও কেন যে এই চক্রটি গ্রেফতার হয়নি তা বলা মুশকিল।
একইভাবে ঝিনাইদহ সদর থানা থেকে প্রায় ২শ’ গজ দূরে প্রিয়ান্না ট্রেডার্সে চুরি হয় ৮ মাস আগে। এখানে সিসি ক্যামেরা থাকলেও ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে ১৪ লাখ টাকার মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যায় ৭/৮ জনের একদল চোরচক্র। সিসি ক্যামেরার স্পষ্ট ভিডিও ফুটেজ জমাসহ এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর দীর্ঘ ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো আসামিকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এছাড়া শহরের শহীদ বীজ ভাণ্ডার, শামীমা ক্লিনিকের পাশে একটি টায়ার ও টাইলসের দোকানসহ একাধিক দোকান কিংবা বাসা বাড়িতে চুরি হলেও অদৃশ্য কারণে চোর শনাক্ত হচ্ছে না।
সিসি ক্যামেরার আওতায় দিনে দুপুরে, রাতে কিংবা ভোরে ঘটে যাওয়া সকল চুরির ঘটনায় থানায় মামলা ও অভিযোগ দায়ের করা হয়, জমা দেয়া হয় ভিডিও ফুটেজ। কিন্তু গেল দুই বছরে ঝিনাইদহ শহরসহ জেলায় সিসি ক্যামেরার আওতায় ঘটে যাওয়া কোনো চুরির ঘটনারই সমাধান হয়নি এখনও। এমনকি ঝিনাইদহ পৌরসভা কার্যালয়ের একাধিক সিসি ক্যামেরার মধ্যেই চুরির ঘটনা ঘটে। সেই চোরও ধরা পড়েনি।
অপরাধ দমনে পুলিশের পক্ষ থেকে ২০১৬ সাল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে ৯ শতাধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। এরমধ্যে ঝিনাইদহ শহরসহ সদর উপজেলায় বসানো হয় ৬ শতাধিক। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে বসানো অধিকাংশ সিসি ক্যামেরাই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অনেক স্থান থেকে আবার খুলে নিয়ে গেছে কে বা কারা।
এছাড়া পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্যক্তিগতভাবেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। কিন্তু কোনো কাজেই আসছে না এ উদ্যোগ। সিসি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও বেড়েই চলেছে অপরাধ কর্মকাণ্ড।
প্রিয়ান্না ট্রেডার্স’র মালিক আব্দুস সাত্তার বলেন, আমার দোকানে চুরির পর সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ জমা দিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি।
তিনি বলেন, চুরির পর পুলিশ একবার দেখতেও আসেনি। চোরই যদি ধরা না পড়ে তাইলে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে লাভ কি?
ঝিনাইদহ জুয়েলারী মালিক সমিতির সভাপতি পঞ্চরেশ পোদ্দার বলেন, শহরজুড়ে একের পর এক চুরির ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়ির নিরাপত্তা চাই।
জেলা পুলিশের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে জেলায় ৫৭টি ও ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৫৪টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে সিসি ক্যামেরার আওতায় কতটি ঘটনা ঘটেছে তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ। তবে এ সংখ্যা ২৫টির বেশি হবে। এরমধ্যে ঝিনাইদহ শহরেই ১৫টির মতো চুরির ঘটনা ঘটেছে।
ঝিনাইদহ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মীর নাসির উদ্দীন বলেন, আমরা ১৮ লাখ টাকার বাজেট নিয়ে শহর জুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু সেই ক্যামেরার বেশির ভাগ অকেজো ও খুলে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এই সিসি ক্যামরা নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। এত দ্রুত কিভাবে সিসি ক্যামেরাগুলো নষ্ট বা চুরি হলো তা খতিয়ে দেখার দাবি জানান নাসির।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস বলেন, অপরাধ দমনে সিসি ক্যামেরা বসানো হলেও অস্পষ্ট ছবির কারণে অনেক সময় অপরাধীদের চেনা যায় না। আমরা চেষ্টা করছি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য।