ছেলেধরা সন্দেহে কুষ্টিয়ায় আট ঘণ্টায় ছয়জন গণপিটুনি শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন রয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন।
সবাইকে পুলিশ গণপিটুনি দেয়ার সময় উদ্ধার করেছে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ছেলেধরা সন্দেহে সোমবার জেলার তিন স্থানে মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা ও লালনভক্তসহ তিনজন গণপিটুনির শিকার হয়েছেন।
সোমবার সকালে জেলার দৌলতপুরে জামাই বাড়ি বেড়াতে আসা হাসিনা খাতুন (৬০) নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়েছে এলাকাবাসী। ওই নারীর বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়।
মারপিটের পর পুলিশ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে স্বজনদের কাছে তাকে হস্তান্তর করেছে।
দৌলতপুর থানাপাড়ায় বাড়ি ওই নারীর জামাই রনি জানান, গত রমজানের ঈদের আগে আমার শাশুড়ি বেড়াতে আসেন। তার মাথায় সমস্যা আছে। রাস্তাঘাট ঠিক চিনতে পারে না। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরে এসে পথ ভুলে যায়। এরপর স্থানীয়রা ছেলেধরা সন্দেহে তাকে মারপিট করেছে।
একই দিন সদর উপজেলার আলামপুর কাথুলিয়া এলাকার লালনভক্ত আনিছুর রহমানের পোশাক দেখে সন্দেহ হলে এলাকাবাসী গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সোমবার দুপুরের দিকে মিরপুর উপজেলার সাহেবনগর বহলবাড়ীয়া এলাকা থেকে এক পাগল ও ধুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে এক পাগলিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এছাড়া জেলার সদর উপজেলার হাটশ-হরিপুর ইউনিয়নে কালা চাঁদ নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধাকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে তাকে উদ্ধার করে। গণপিটুনির শিকার কালা চাঁদের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলায়।
শহর ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি এসএম কাদেরী শাকিল বলেন, একজনকে সন্দেহ হলেই পেটাতে হবে- এটা কোনো আইনকানুনের মধ্যে পড়ে না। আইন বলেও তো একটা কথা আছে। সন্দেহ হতেই পারে। সেক্ষেত্রে তাকে ধরে পুলিশের হাতে দিলেই হয়। অথবা এলাকার মাতব্বরের কাছে নিয়ে যান, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করুন।
তিনি বলেন, মনে রাখা দরকার, যে কেউ এরকম ঘটনার শিকার হতে পারে। এই সমস্যাকে এখন সামাজিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, গত আট ঘণ্টায় গণপিটুনি দেয়ার সময় পুলিশ ৬ জনকে উদ্ধার করেছে। গুজব রটিয়ে গণপিটুনি বন্ধ করতে আমরা সচেতনতামূলক পোস্টার করেছি। পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্নভাবে প্রচারনা চালাচ্ছি। পাশাপাশ পুলিশ সদস্যদের টহল বাড়ানো হয়েছে।
তিনি সব থানার ওসিদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুধিসমাজ ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।