যশোরে বিমান বাহিনীর সিভিল অডিটর চন্দন কুমার ঘোষ (৩৮) হত্যা মামলা তদন্ত ও আটক তৎপরতায় শতভাগ সফলতা দেখিয়েছে পুলিশ। পুলিশি আটক অভিযানে ধৃত ভিডিও ফুটেজের দু’আসামি পুলিশকে তথ্য দিয়েছে মাত্র ৭শ’ টাকা পেয়েছিল চন্দনের কাছে। ওই টাকা ভাগ করে নেয় মিশনের ৪ জন। ছিনতাই করা সনি এন্ড্রোয়েড ফোনটি মাত্র ৫শ’ টাকায় বিক্রি করে।
ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে মোস্টওয়ান্টেড ছিনতাইকারী বেজপাড়ার শুভ ও আলী আটক ও ২ জুলাই গণপিটুনীতে ছুরিকাঘাতকারী তানজিম ধরাশায়ী হওয়ায় এলাকায় সন্তোষ বিরাজ করে। একদিন পর ৩ জুলাই হাত-পা ভাঙার ভয়ে আত্মসমর্পণ করেছে চুতুর্থ মোস্টওয়ান্টেড ছিনতাইকারী শফিকুল ইসলাম।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, সাধারণত এ ধরণের মামলা বা ঘটনায় এত অল্প সময়ে পুংখানুপুংখ লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। কৌশলী অনুসন্ধানী অভিযানের কারনেই ৪ অভিযুক্তই এখন আইনের আওতায়।
গত ২০ জুন ভোর রাতে যশোরে ফেরা বিমান বাহিনীর সিভিল অডিটর চন্দন কুমার ঘোষ সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের হাতে খুন হন। ওই দিন ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে তার কাছে থাকা একটি ব্যাগ ছিনতাইয়ের সময় বাধা দিলে ছিনতাইকারী দলের একজন তাকে কয়েকটি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এ ঘটনার সিসি টিভির ফুটেজে পাওয়া ৪ উঠতি যুবকের স্কেচ করে পুলিশ। প্রথমে ফুটেজে ছিনতাই করে ব্যাগটি নিয়ে পালানো যুবকের নাম ঠিকানা ও নানা তথ্য প্রথমে পুলিশের কাছে চলে আসে।
পুলিশ অনুসন্ধানী অভিযান হিসেবে প্রথমে চক্রের একজনের ছবি নিয়ে ব্যস্ত মোড়, অফিস, চায়ের দোকানসহ যশোর শহরের বিভিন্ন স্পটে সার্স লাগিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে গত ২৪ জুন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অরুন কুমার দাস কৌশলী অভিযান চালিয়ে আটক করেন শহরের বেজপাড়া গুলগুল¬ার মোড়ের আব্দুল হালিমের ছেলে আলোচিত ছিনতাইকারী হাসিবুর রহমান শুভকে। সে হত্যা ও ছিনতাইয়ের দ্বায় স্বীকার করে আদালতে জানায়, চন্দনের কাছে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নিতেই তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়।
এ ছিনতাইয়ের সাথে সেসহ আরও ৩ জনের নাম বলে দেয়। তারা হচ্ছে বেজপাড়া বিহারী কলোনীর মোহাম্মদ আলী, মৃত আবুল হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম ও মুড়লীর শরীফ হোসেনের ছেলে তানজিম। এরমধ্যে মুড়লীর তানজিম ছুরি চালায়। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা ওই মোহাম্মদ আলী, তানজিম ও শফিককে আটকের জন্য নানামুখি অভিযান অব্যাহত রাখেন। ২৬ জুন আটক হয় মোস্টওয়ান্টেড বেজপাড়ার মোহাম্মদ আলী।
শুভ ও মোহাম্মদ আলী পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দিতে জানায়, চন্দনের কাছে তারা মাত্র নগদ ৭শ’ টাকা পেয়েছিল। আর সনি এন্ড্রোয়েড একটি ফোন সেটটি পেয়েছিল। ওই ৭শ’ টাকা তারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছিল। মোবাইল ফোনটি মাত্র ৫শ’ টাকায় বিক্রি করে নাস্তা করেছিল। শুভ ও আলীকে আদালতে সোপর্দ করে অপর দু’জন তানজিম ও শফিকুলকে আটকে অভিযান শুরু করে পুলিশ।
এরই এক পর্যায়ে ২ জুলাই ভোর রাতে গণপিটুনীতে হাত পা ভাঙা অবস্থায় তানজিম আটক হয়। এদিন মধ্যরাতে শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার কোল্ড স্টোরেজ মোড়ে ছিনতাইকালে গণপিটুনীর শিকার হয়ে সে ধরাশায়ী হয়। ছুরিকাঘাতকারী তানজিম গণপিটুনীর শিকার হওয়ায় বেজপাড়ায় সন্তোষ বিরাজ করে। শুধু কয়েক’শ টাকা ও মোবাইল ফোনের জন্য চন্দনকে খুন করা তানজিম গণপিটুনী খেয়েছে, এমনকি তার হাতপা ভেঙে গেছে এ সংবাদে সন্তোষ প্রকাশ করেন অনেকে। অনেকে গ্রামের কাগজে ফোনও করেন।
এদিকে, গণপিটুনীতে ধরাশায়ী হয়ে হাত-পা ভাঙা অবস্থায় তানজিম আটক হওয়ায় আতংকিত হয়ে পড়ে পলাতক মিশনের চুতুর্থ সদস্য শফিকুল ইসলাম। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তেজিত জনতার হাতে ধরা পড়ে হাত-পা ভাঙার ভয়ে ৩ জুলাই আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে শফিক। তার ৩ সহযোগী আইনের আওতায় চলে আসা ও তানজিমের পরিণতি ভেবে সে হয়তো আত্মসমপর্ণের পথ বেছে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা অরুন কুমার দাস।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ ওসি তদন্ত আবুল বাশার মিয়া জানিয়েছেন, মামলাটি শতভাগ এগিয়েছে। সব আসামিই আইনের আওতায় এসেছে। এখন চার্জশিট দেয়ার প্রক্রিয়া চলবে।