ইবি প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা স্থগিত ছাত্রলীগের সভাপতি শাহীনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম গত ২৯ জুন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজ “আমরা ছাত্রনেতা, নিয়োগ বাণিজ্য করতেই পারি, শিক্ষকরা কেন করবে? শীর্ষক নিউজ প্রকাশিত হওয়ায় সাংবাদিকদেরকে লাঞ্চিত করেছে।
রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের ভিতর উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের সামনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ডেইলি সান পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবু সালেহ শামীম, দপ্তর সম্পাদক ও দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মুরতুজা হাসানসহ অন্যান্য সাংবাদিকদেরকে হুমকি দিয়েছেন এবং লাঞ্চিত করেছেন এ দুজন ছাত্রনেতা।
এসময় সাধারণ সম্পাদক হালিম বলেন, স্যারের সাথে আমরা কথোপকথন করেছি কথা বলেছি সেটা কেন নিউজ করছিস? দালালি ছাড়! আর ভিডিও কেন অর্ধেক দিয়েছিস? এর জবাবে সাংবাদিক আবু সালেহ বলেন, ইউটিউবে পুরো ১০মিনিটের ভিডিও দেওয়া আছে। তখন ছাত্রলীগ সভাপতি ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়ে বলেন, তুই কি নিউজ করছিস আমরা নিয়োগ বাণিজ্য করি? তখন হালিম বলেন, কালেরকন্ঠ সহ অন্যান্য জায়গায় অন্য নিউজ করছে, এগুলো ঠিক না। হালিম সাংবাদিকদেরকে বলেন, তুমি এভাবে নিউজ করতে পারোনা। সাংবাদিক আবু সালেহ বলেন, দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আপনি এমন কথা বলতে পারেন না। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে উপাচার্য অফিস থেকে সাংবাদিকদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দিতে দিতে বেরিয়ে যায় ইবি শাখা ছাত্রলীগের এই দুজননেতাসহ অন্যান্য কর্মীরা।
২৯ জুন শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহীনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিমের নেতৃত্বে নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। মিছিল শেষে তারা উপাচার্যের কার্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের ও মূলহোতার শাস্তির দাবি জানায়। একপর্যায়ে উপাচার্যের কাছে নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাতে গিয়ে জুয়েল রানা হালিম বলেন, ‘আমরা ছাত্রনেতা, নিয়োগ বাণিজ্য করতেই পারি, শিক্ষকরা কেন করবে? এর জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘তোমরা নিয়োগ বাণিজ্য করতেই পারো, তা আমি মানলাম না।’ পরে হালিম বলেন, ‘আমি এটা বললাম কোন পারপাসে, আপনারাই বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে সমস্ত শিক্ষক আমরাই নিয়োগ দিয়েছি।’
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ইবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়। কমিটি স্থগিত হওয়ার পর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। এমনকি গত ২৮ জুন বিকালে সভাপতির কর্মীদের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে এতে নূর আলম আহত হয়ে মেডিকেলে চিকিৎসা নেন।
এ বিষয়ে সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এক পত্রিকার প্রতিনিধিকে দেয়া বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমান কমিটির কার্যক্রম স্থগিত। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’ তবে মারামারির ঘটনায় কমিটি স্থগিতের কথা বলে তিনি কোন বক্তব্য দেননি। কিন্তু শনিবার থেকে হঠাৎ নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন।
পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা উপাচার্য বরাবর ছাত্রলীগ কর্তৃক হুমকির প্রেক্ষিতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সাংবাদিকরা দাবি করে বলেন, এতে সাংবাদপত্রের ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ভিত্তিহীন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী বলেন, কোন সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরণ প্রত্যাশিত নয়, এটা নিন্দাযোগ্য। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সাংবিধানিক অধিকার। এদিকে সাংবাদিকরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ শামীম বলেন, এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি তারা এ বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. আনিছুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক চলাফেরা করার জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন আমরা তা নিশ্চিত করবো।