চৌধুরী নুরুন নাহার জেনারেল হাসপাতালের ১৮বছর পুর্তি ও হাসপাতালের নতুন ভবনে উদ্বোধন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গতকাল সন্ধায় শহরতলী চৌড়হাস ফুলতলা মোড়ে অবস্থিত এ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে এক অনাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো: জহির রায়হান এ নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন। চৌধুরী নুরুন নাহার জেনারেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান রেজবুল হক খান চৌধূরী মান্নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। কুষ্টিয়া পৌরসভার জননন্দিত মেয়র আনোয়ার আলী ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফরুল্লাহ খান চৌধুরী লাহরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের পরিচালক শামসুল আলম। এর আগে অতিথিদের হাসপাতালের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরন করে নেয়া হয়।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান বলেন,মানবিক কর্মকান্ড মানুষকে গুনাম্বিত করে। আমাদের দেশের বিত্তশালী ও হৃদয়বান ব্যক্তিরা যখন সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং সাধারন মানুষদের কল্যানে কিছু করে সেটা সকলের জন্য উপকারে আসে। আজ চৌধূরী নুরুন নাহার হাাসপাতাল হাটি হাটি পায়ে স্বল্প খরচে এলাকার মাুষের মাঝে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে ইতিমধ্য মানুষের হৃদয়ের মাঝে স্থান করে নিয়েছে। আজকের এই ভবন উদ্বোধনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য নতুন দ্বার উম্মোচিত হলো। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি এলাকার মানুষের যত্ব করে লালন করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলকে আন্তরিক ও সচেষ্ঠ হতে হবে। তিনি আরো বলেন, কুষ্টিয়ার এই খান চৌধূরী পরিবারটি এলাকার মানুষের চিকিৎসার কথা ভেবে ১৮বছর আগে এই প্রতিষ্ঠানটি চালূ করেছিল। আজ অনেক দুর এগিয়েছে। বর্তমানে এখানে অনেক উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা হয়েয়ে যা মানুষেরা স্বল্প মুল্যে সেবা গ্রহন করতে পারবে। জেলা প্রশাসক বলেন, কুষ্টিয়ায় অবস্থানকালীন কুষ্টিয়ার মানুষেরা আমাকে সহযোগিতা এবং সম্মান করেছে আমি জেলাবাসীর নিকট চির কৃতজ্ঞ।
বিশেষ অতিথি কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীকে বলেন, মহৎ পেশার মানুষেরা আমাদের ঠকাচ্ছে তাদের উচিত এই মহৎ পেশার প্রতি সম্মান রেখে সাধারন মানুষের সেবার ব্রতি নিয়ে কাজ করা। তানা হলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়বো। তিনি বলেন, একটি হাসপাতাল অনেক গুরুত্বপুর্ন বিষয়। হাসপাতাল গুলোর বর্জ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের সচেতন হতে হবে। সেবা ও পরিস্কার পরিচ্ছনন্নতা আমাদের মুল লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাহলে অভিষ্ঠ লক্ষ্য অর্জন সহজতর হবে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফরুল্লাহ খান চৌধুরী লাহরী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান কিন্তু এটিকে বাঁচিয়ে রাখা এবং এর সম্মান বৃদ্ধির দায়িত্ব এলাকাবাসী আপনাদের। আপনাদের সম্পদ মনে করে এটিকে লালন করে টিকিয়ে রাখতে হবে। এলাকা মানুষেরা যাতে উপযুক্ত সেবা গ্রহন করতে পারে সে বিষয়ে আপনাদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে চৌধুরী নুরুন নাহার জেনারেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান রেজবুল হক খান চৌধূরী মান্না বলেন, সকলের ভালবাসার অবদান আজকের এই হাসপাতালটি। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগনকে স্বল্প মুল্যে সেবা প্রদান আমাদের মুল লক্ষ্য আর এই লক্ষ্য অর্জনের সহায়ক হিসেবে আপানারা আমাদের পাশে সব সময় থাকবেন বলে আশা রাখি। তিনি বলেন, এই হাসপাতাল কেন্দ্রির আরো উন্নতি করার ইচ্ছে আমাদের রয়েছে। গরীব, দুস্থ ও অসহায় মানুষদের চিৎিসার জন্য আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহপাক আমাদের যেন সেই তৈৗফিক দান করেন। তিনি হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থা উন্নত করা এবং এ বিষয়ে বিশেষ নজর রাখবেন বলে জানান। পরে জেলা প্রশাসক নতুন ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর আগে জেলা প্রশাসক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও যন্ত্রপাতি ঘুরে ঘুরে দেখেন। তিনি হাসপাতালটি পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও এফবিসিআই এর সাবেক পরিচালক বিজয় কুমার কেজরীওয়াল,কুষ্টিয়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কমিশনার সাইফুল হক মুরাদ,কুষ্টিয়া বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির কার্যকরি সভাপতি নওশের আলী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াত এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংবাদিক নুরুল কাদের।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয় স্বল্প পরিসরে।
শুরুতে এই হাসপাতালে লেবার ওয়ার্ড, প্যাথলজি, আউটডোর এবং হাতে গোনা কয়েকটি বেড দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে হাসপাতালের কার্যক্রম ও পরিধি বাড়তে থাকে। স্বল্প ফি‘র মাধ্যমে উন্নতÍ চিকিৎসা সেবা প্রদানই এই হাসপাতালের লক্ষ্য ছিল। আর সেই লক্ষ্যে দাঁড়িয়ে আমরা দীর্ঘ ১৭বছরের সেবা শেষে আজ ১৮বছরে পা রাখতে সক্ষম হয়েছে যা এলাকাবসী সকলের সহযোগিতা এবং আন্তরিকতায় সম্ভব হয়েছে।
নতুন বিশালাকার ৩য় তলা ভবনে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্রত নিয়ে আজ উপস্থিত। মাত্র ২শত টাকা ফি নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা গ্রহন এবং বিশ্বের সর্বাধুনিক মেশিনারির মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এখানে ৫০০এম ডিজিটাল এক্স্রে মেশিন সিআর কম্পিউটারাইজ (জাপান ও কোরিয়া)। হরমোন এনালাইজার (জার্মানের), বায়ো কেমিকেল এনালাইজার,ইলোক্টোলাইট, ইকো মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন (কোর ডি কালার ডুপলেক্স),অত্যাধুনিক ইসিজি মেশিন ( একই সাথে হার্টের সমস্যা গুলো উল্ল্খেপুর্বক রিপোর্ট প্রদান করা হবে। এছাড়া অত্যাধুনিক সরঞ্জামসহ ২টি অপারেশন থিয়েটার।
অভিজাত টেকনিশিয়ান ও নার্স ছাড়াও এ হাসপাতালে পুরুষ এবং মহিলা ২জন চিকিৎসকের সার্বক্ষনিক উপস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া আউটডোরে দেশের সুনামখ্যাত চিকিৎসকেরা নিয়োমিত রোগী দেখবেন এবং সেবা প্রদান করবেন।