দামুড়হুদার মদনায় মোবাইল ফোনে সাড়া দিয়ে প্রেমিকার বাড়িতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্র। গণপিটুনির শিকার স্কুলছাত্র দামুড়হুদার সাড়াবাড়িয়া গ্রামের আক্তারুল হকের ছোট ছেলে মদনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আকিবুল বাশার।
রবিবার সকাল ৭টার দিকে প্রেমিকা মাইমুনা খাতুনের ডাকে সাড়া দিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয় ওই স্কুলছাত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সাড়াবাড়িয়া গ্রামের আক্তারুল হকের ছোট ছেলে মদনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আকিবুল বাশারের (২০) সাথে প্রায় ৪ বছর আগে প্রেম সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই ইউনিয়নের মদনা বাজার পাড়া মসজিদের ভারপাপ্ত ইমাম ও বাজার পাড়ার মিজানুর রহমানের বড় মেয়ে মাইমুনা খাতুনের (১৬)। তারা দু’জনই মদনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই সাথে পড়াশোনা করার সুবাদে দু’জনের মধ্য প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ৪ বছর ধরে চলতে থাকে তাদের এই প্রেম কাহিনী।
সূত্রে আরো জানা যায়, তাদের দু’জনের প্রেমের কথা জেনে যায় মাইমুনার পরিবারের লোকজন। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার সকাল ৭টার দিকে মাইমুনা মোবাইল ফোনে ডেকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে প্রেমিক আকিবুলকে এবং কৌশলে মাইমুনার চাচাতো ভাইকে দিয়ে বাড়ির ভিতর আটকিয়ে অনৈতিক কাজের দোষ দিয়ে গণপিটুনি দিতে থাকে। পরে মদনা গ্রামে সালিশ বৈঠকের গ্রাম্য মাতব্বরদের হাতে তুলে দেন মেয়ের পরিবার।
আবুল বাশার নামের এক মাতব্বর জানান, মেয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ কারায় সালিশ বৈঠকে মুসলেকা নিয়ে ছেলেকে তার পরিবারের লোকজনের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে, সালিশ বৈঠকে ছেলের পরিবারের কাছে থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে তারপর ছেলেকে তার বাবার কাছে দেয়া হয়েছে। তবে টাকা নেয়ার ব্যাপারে কথা বললে মাতব্বরা বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এদিকে মেয়ের বাবা মিজানুরের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমার মেয়ের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় আমার ভাইয়ের ছেলে শরিফুল হাতেনাতে ধরে। এ সময় তার ডাকে লোকজন ছুটে এসে ছেলেটাকে অনেক মারধর করে।
মাতব্বরদের টাকা নিয়ে ছেলেকে ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি টাকা পয়সার ব্যাপারে কিছু জানেন না। আর টাকা পয়সা নিয়ে আমার সাথে কোনো কথা হয়নি। এদিকে গণপিটুনির শিকার আকিবুল বাশারকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
টাকা নিয়ে ছেলেকে ছেড়ে দেয়া, মেয়ের সাথে ছেলের অনৈতিক কার্যকলাপ, আর এই নিয়ে মেয়ে পক্ষের লোকজনের কোনো প্রকার সামাজিক প্রভাব না থাকায় সমাজের মানুষের মধ্য এক প্রকার সমালোচনার ঝড় বইছে। তবে কি গোপনে টাকা নিয়ে সবকিছু মিটিয়ে ফেলেছে মেয়ের বাবা, নাকি অন্যকিছু আছে? সবকিছু মিলিয়ে বড় ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন মেয়ের বাবা ও গ্রাম্য মাতব্বররা। আর ইমাম সাহেবের মেয়ে হওয়াতে পাড়ায় পাড়ায় একই কথা ‘মোল্লার মেয়ে মসজিদে পায়খানা করলে দোষ নেই’ বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে বিচার বিশ্লেষণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছে গণপিটুনির শিকার আকিবুলের পরিবার।