চুয়াডাঙ্গায় ভুয়া পুরোহিত সেজে স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ মামলায় রাজিব শেখ নামে একজনকে যাবজ্জীবন, ডাকাতির প্রস্তুতি ও বিস্ফোরকের আলাদা দুইটি মামলায় আটজনের প্রত্যেককে সাত বছর করে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকালে চুয়াডাঙ্গার জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ রায় প্রদান করেন।
যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত রাজীব শেখ ফরিদপুর জেলার শিবরামপুর গ্রামের শহিদুল শেখের ছেলে।
এছাড়া ডাকাতির প্রস্তুতি ও বিস্ফোরকের দুটি মামলায় ১৪ বছর করে সাজা প্রাপ্তরা হলেন-ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহালয়া গ্রামের আজিবর আলীর দুই ছেলে কুরবান আলী (৩২) ও লোকমান আলী (২৪), একই গ্রামের মৃত জামাত আলীর ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩২), গোপালপুর গ্রামের মৃত এলেম মন্ডলের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (২৪), কোটচাঁদপুর উপজেলার রুদ্রপুর গ্রামের আফজাল মন্ডলের ছেলে লাল চাঁদ (২৮), আসাদুল মন্ডলের ছেলে সোহানুর রহমান জনি (২৫), কলম আলীর ছেলে আকিমুল ইসলাম (২৫) ও লালমনিরহাট জেলার ভাটিবাড়ি গ্রামের জামিনুর রহমানের ছেলে শহিদুল ইসলাম সজিব (২৪)।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শামসুজ্জোহা জানান, ফরিদপুরের গোয়াল চামট গ্রামের এক পুরোহিত তার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে ২০১৬ সালে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর গ্রামে বেড়াতে আসেন। ১৬ অক্টোবর বিকালে রাজিব শেখ নামে এক বখাটে পুরোহিত বেশে ওই পুরোহিতের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনার পরদিন ওই পুরোহিত দামুড়হুদা থানায় মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ এনে রাজিব শেখকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। দামুড়হুদা থানা পুলিশ এ মামলার তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর একমাত্র আসামি রাজিব শেখকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক জিয়া হায়দার আলোচিত এ মামলায় মোট ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য যাচাই করেন। যাচাইয়ের পর একমাত্র আসামি রাজিব শেখকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
এ দিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল ইসলাম ডাকাতির প্রস্তুতি ও বিস্ফোরকের দুটি মামলায় আট জনের প্রত্যেককে সাত বছর করে ১৪ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) এনামুল হক জানান, ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট রাতে সদর উপজেলার হিজলগাড়ি গ্রাম থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে কুরবান আলী (৩২) লোকমান আলী (২৪), তরিকুল ইসলাম (৩২), আবু বক্কর সিদ্দিক (২৪), লাল চাঁদ (২৮), সোহানুর রহমান জনি (২৫), আকিমুল ইসলাম (২৫) ও শহিদুল ইসলাম সজিবকে (২৪) গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি রিভলবার ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম।
ঘটনার রাতেই গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি, অস্ত্র ও বিস্ফোরকের তিনটি মামলা দায়ের করেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক জগদীশ বসু তদন্ত শেষে একই বছরের ১৪ নভেম্বর গ্রেফতারকৃত আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
বিজ্ঞ আদালত এ মামলায় মোট ১৮ জনের সাক্ষ্য যাচাই শেষে ডাকাতির প্রস্তুতি ও বিস্ফোরক মামলায় প্রত্যেকের সাত বছর করে ১৪ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। এছাড়া প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার সময় শহিদুল ইসলাম সজিব ও আবু বক্কর পলাতক ছিলেন। অপর অস্ত্র মামলায় সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।