ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাড়ায় চালিত পরিবহনে চলছে নৈরাজ্য। এসব বাসের বেশিরভাগের ফিটনেস নেই। স্টাফরা যত্রতত্র বাইরের যাত্রী ওঠান। প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পরিবহন ভাড়ার পেছনে বছরে ৪ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হলেও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্র্তৃপক্ষ বলছে, ভাড়ায় চালিত বাসের স্টাফদের কাউন্সেলিং করা হলে কিছুদিন ঠিকঠাক থাকে। পরে আবারও একই ঘটনা ঘটে। এ জন্য ধীরে ধীরে নিজস্ব পরিবহন সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, জিপ ও ছোট-বড় বাস মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে ৭৪টি গাড়ি রয়েছে। এগুলো প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনা-নেওয়া করে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিনে ট্রিপ হিসেবে ৩২টি বাস ভাড়ায় চালায়। ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া রুটে ১২টি বড় ও ৩টি মিনিবাস; ঝিনাইদহ রুটে ১২টি বড় ও ১টি মিনিবাস এবং শৈলকুপা রুটে ৪টি মিনিবাস চলাচল করে। এতে তিন শিফটে দুই রুটে দিনে ছয়বার গড়ে ৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়।
ভাড়াবাবদ বাস মালিকদের বিশ্ববিদ্যালয় দিনে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৪০ টাকা দেয়। এর মধ্যে কুষ্টিয়াগামী বড় বাস প্রতি ট্রিপে ১ হাজার ৭৯০ ও মিনিবাস ১ হাজার ৬৯০ টাকা পায়। ঝিনাইদহগামী ট্রিপে বড় বাস ১ হাজার ৮২০ ও মিনিবাস ১ হাজার ৬৫০ টাকা পায়। আর শৈলকুপাগামী মিনিবাসকে প্রতি ট্রিপে দিতে হয় ১ হাজার ৩৪০ টাকা করে। এ ছাড়া ঝিনাইদহ রুটে প্রতি রাতে ১ হাজার ৪৪০ টাকায় একটি বড় বাস চলাচল করে। সব মিলিয়ে বছরে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা শুধু এই খাতে ব্যয় হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ অর্থবছরের শুরুতে ঝিনাইদহের সময় এন্টারপ্রাইজ ও কুষ্টিয়ার বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীর কাছ থেকে ভাড়া নেয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিজস্ব বাসে চলাচলে কোনো ঝামেলা হয় না। কিন্তু ভাড়ায়চালিত বাসগুলোর চালক ও তার সহকারীরা (হেলপার) তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পথে থামিয়ে বাইরের যাত্রী ওঠান। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের রেখে চলে আসেন। বেপরোয়া গতিতে চালানো ছাড়াও সঠিক সময়ে নির্ধারিত স্থানে আসে না। আধা ঘণ্টা থেকে কখনো এক ঘণ্টা দেরি হয়। এতে ক্লাস ধরতে পারেন না তারা। কিছু বললে আইডি কার্ড দেখতে চেয়ে হয়রানি করা হয়।
কুষ্টিয়া থেকে ক্যাম্পাসে আসা বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী জানান, মেয়েদের বাসে বাইরের যাত্রী তোলা হয়। এতে তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে। প্রতিদিন বাস পরিবর্তন করে লক্কড়ঝক্কড়গুলো দেওয়া হয়। ঝিনাইদহ থেকে আসা অর্থনীতির ছাত্র আবু সালেহ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতি সেশনে আমাদের থেকে ভাড়ার অর্থ কেটে নেয়। কিন্তু আমরা কাক্সিক্ষত সেবা পাই না। ভাড়ায়চালিত বাসের স্টাফরা বাইরের যাত্রী বসিয়ে, আমাদের দাঁড় করিয়ে আনা-নেওয়া করেন। প্রতিবাদ করলে গালাগাল করেন।’
ঝিনাইদহ রুটে সময় এন্টারপ্রাইজের বাসগুলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বাড়তি পয়সার লোভে বাইরের যাত্রী তোলে, এটি অস্বীকারের সুযোগ নেই। সব সময় যাতে এমন না হয়, তার জন্য চেষ্টা করছি। আর কোনো চালক বা হেলপারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ মালিকদের জানালে কিছুদিন ভালো চলে। পরে যা তা-ই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা ভেবে নিজস্ব পরিবহন সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি দুটি বাস কেনা হয়েছে। পুরোপুরি নিজস্ব পরিবহন সম্ভব হবে না। তবে আরও ভালো সেবা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’