হিসাবরক্ষণ অফিস আর অডিট কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে ঘুষ নিচ্ছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এ নিয়ে গাংনীতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় করাতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) সামসুজ্জোহার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ মানুষের মুখে মুখে।
শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ ঘুষ গ্রহণ করছেন। উৎকোচ দিতে অপরাগতা প্রকাশে বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক সাহাব উদ্দীন শিক্ষক সিন্ডিকেটের হাতে শারীরিকভাবে সম্প্রতি লাঞ্ছিত হয়েছেন। গাংনী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন অডিট আর হিসাবরক্ষণ অফিসের অলিখিত খরচ মেটানোর জন্য।
গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে দেখা যায় অফিস সহকারীর চেয়ারে বসে কর্মরত চৌগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি রাজু আহমেদ। সেই টেবিলের সামনে বসে আছেন অফিসের বড়বাবু রেজাউল হক। লোকবল সংকট এবং কাজে অভিজ্ঞ হিসেবে রাজু টিইও’র মৌখিক নির্দেশে এখানে অফিস সহকারীর দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান। রাজু বরাদ্দের অর্থ ছাড়ের ঘুষ নেয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমি ঘুষ নিচ্ছি না। আমার নাম দিয়ে কিছু লিখবেন না। স্যারের (টিইও) নির্দেশে শিক্ষকরা আমার কাছে টাকা জমা রাখছেন। আমি চৌগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি। লোকবল সংকটে এই শিক্ষা অফিসে কাজের জন্য আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে গাংনীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন খাতে প্রায় ৭৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১৪৬টি বিদ্যালয়ে স্লিপ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪০ হাজার টাকা করে, ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ১৩টি বিদ্যালয়ে দেয়া হয়েছে ১ লাখ করে, টয়লেট মেরামত বাবদ ১০টি বিদ্যালয়ে দেয়া হয়েছে ২০ হাজার টাকা করে, এবং রুটিন মেরামত বাবদ ৫৫টি বিদ্যালয়ে দেয়া হয়েছে ১০ হাজার টাকা করে। বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড়ের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সামসুজ্জোহা কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন খাতে ঘুষ দাবি করেছেন। তার মধ্যে স্লিপ বরাদ্দের জন্য বিদ্যালয় প্রতি ৫০০ টাকা, ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ১ হাজার করে, টয়লেট মেরামত বাবদ ৫০০ টাকা এবং রুটিন মেরামত বাবদ ৩০০ করে টাকা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যার পরিমাণ লক্ষাধিক টাকা হবে।
ঘুষ গ্রহণে সহযোগিতা করছেন শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেট। যারা বিভিন্ন সময় উপজেলা শিক্ষা অফিসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিতর্কিত হয়েছেন। তারা হলেন প্রধান শিক্ষক গোলাম ফারুক, পারভেজ সাজ্জাদ, জিয়া আহসান মাসুম, তামজিদুর রহমান, সহকারী শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম, গোলাম হাসান। আর ঘুষের টাকা চৌগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি রাজু আহমেদের কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। অফিসের বড়বাবু রেজাউল হক এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি।
অভিযুক্ত গাংনী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সামসুজ্জোহা বলেন, ট্রেজারি ও অডিট শাখায় কিছু টাকা দেয়া লাগে। সে কারণে শিক্ষক নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়ে টাকা আদায় করেছেন। যেভাবে টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়।