কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে গভীর রাতে প্রসূতি রোগী ভাগিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে অদক্ষ আয়া দিয়ে নরমাল ডেলিভারি করাতে গিয়ে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রসূতি ও মৃত নবজাতককে তরিঘরি করে ইজিবাইক যোগে জোরপূর্বক বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানাযায়, কুষ্টিয়ার ভেরামারা বহলবাড়িয়া চন্ডিপুর গ্রামের কাঠ মিস্ত্র রবিউলের স্ত্রী বিথী খাতনের প্রসব ব্যাথা শুরু হলে তাকে মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছিল বিথীর। রাত ২ টার দিকে সেখানে হাজির হয় শহরের পৌর গোরস্তানের পাশের পদ্মা ক্লিনিকের দালাল শরিফুল। সে রোগীর স্বজনদের জানায় রোগী হাসপাতালে থাকলে বাচ্চাকে বাছানো যাবে না। দ্রুত সিজারিয়ান করতে হবে এবং এই মুহুর্তে ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হবে। সে সময় কর্তব্য নার্সের বাধার শর্তে রোগীর স্বজনদের নানা ভাবে বুঝিয়ে স্যালাইন চলা অবস্থায় রোগী হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নিয়ে যায় পদ্মা ক্লিনিকে।
রোগীর স্বজনরা জানান, পদ্মা ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে রোগীর স্বজনদের কাছে থেকে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে ভর্তি দেখানো হয় রোগীকে। সে সময় ডাক্তার নার্স না থাকায় এক আয়াকে নার্সের ড্রেস পরিয়ে রোগীকে ডেলিভারির জন্য ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোরের দিকে ক্লিনিক থেকে জানানো হয় মৃত বাচ্চা হয়েছে। তবে রোগীর রিলিজ নিতে আরো ৮ হাজার টাকা দাবি করে ক্লিনিকে কর্তব্যরতরা। এ সময় মৃত বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় কান্নারত অবস্থায় ঘুরতে থাকে বাচ্চার নানী সুমিতা খাতুন। এ খবর পৌছে যায় কুষ্টিয়া সদর থানায়।
সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখা যায় মৃত বাচ্চা নিয়ে কান্না করছে এক মহিলা। তার সাথে কথা বলে জানাগেল, উনি বাচ্চার নানী। তিনি জানান, তারা কিছুই বুঝতে পারেন নি বাচ্চা টা কিভাবে মারা গেল। যখন ক্লিনিকে নিয়ে আসে তখন সেখানে কোন ডাক্তার তাদের চোখে পড়েনি। ভোরের দিকে জানানো হয় বাচ্চা মারা গেছে!
সেখানে উপস্থিত রবিউলের বড় ভাই সাব্বির জানান, হাসপাতাল থেকে অনেকটা জোর করেই স্যালাইন চলা অবস্থায় তার ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে এসেছে শরিফুল নামের এক লোক। ডাক্তার রেডি আছে নিয়ে গিয়েই সিজার করে দেবে বলে নিয়ে আসে কিন্তু আসার পরে কোন ডাক্তার ছিল না। মাঝ বয়সী এক মহিলা নার্সের ড্রেস পরে বাচ্চা নরমাল ডেলিভারীর চেষ্টা করে। পরে জানানো হয় বাচ্চা মারা গেছে। কিন্তু পরে আর ওই মহিলাকে দেখেননি বলে কেদে ফেলেন এবং বলে এর বিচার চাইবো কার কাছে?
এসময় রোগী মৃত বাচ্চাকে নিয়ে থানায় আসতে চাইলেও ক্লিনিকের মালিকের কয়েক জন জোরপূর্বক একটি ইজিবাইকে করে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ক্লিনিকের ডাক্তার বা নার্সের বক্তব্য নিতে চাইলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। মালিক যা করার থানাতে করবে বলে সাফ জানিয়ে দেন।
এব্যাপারে সিভিলসার্জন অফিস থেকে জানানো হয়, ওই ক্লিনিকটির অনেক দিন আগেই নবায়ন বাতিল হয়ে রয়েছে ক্লিনিকটি চলছে কি না তা আমাদের জানানেই।