প্রায় ৬৭ দিন বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার (১ জুন) সকাল থেকেই কুষ্টিয়াতে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। একই সঙ্গে কুষ্টিয়া থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার পরিবহনও।
কুষ্টিয়ায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারির মধ্যে দিয়ে চলছে গণপরিবহন।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কুষ্টিয়া জনাব মোঃ আসলাম হোসেন নিজে গণপরিবহনে সরকারি আদেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা নজরদারি করেন। প্রতিটি বাস কাউন্টার জীবাণুমুক্ত করার এবং তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের ব্যাবহার নিশ্চিত করার নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, কুষ্টিয়ার মানুষ ইতোমধ্যে অনেক সচেতনভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সবাইকেই শরিক হতে হবে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে আরো এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন তার সকল শক্তি, কৌশল নিয়োগ করেছে এই করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবেলা করতে। প্রশাসনের প্রতিটি ব্যক্তিই দিনরাত কাজ করে চলেছেন। যখন যেখানে যা করা প্রয়োজন তাই করা হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত আছে। যতদিন প্রয়োজন সেটা করা হবে।
এ সময় তিনি মাস্ক ব্যাতিত গণপরিবহনে চলাচল সসম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দেন। কাউন্টারে এবং বাসে কর্মরত প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক এবং গ্লোভস পরিধানের নির্দেশনা প্রদান করেন।
জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলেও সবার মধ্যেই করোনাভাইরাস আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা যায়।
এদিকে, করোনাভাইরাসের কেউ মাস্ক না পরলে জেল জরিমানার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। শনিবার (৩০ মে) রাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে সবসময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তা নাহলে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ধারা ২৪ (১), (২) ও ধারা ২৫ (১) ও (২) অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এই আইন বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ।এদিকে, আইনের ধারা অনুযায়ী কেউ মাস্ক না পড়ে বের হলে ৬ মাস জেল অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া কেউ যদি এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন তাহলে তিন মাসের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮, ২৪ (১), (২) দেখা যায়:
২৪। (১) যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটিতে সহায়তা করেন, বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তাহার নিকট গোপন করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
এছাড়া আইনের ২৫ ধারায় রয়েছে:
২৫। (১) যদি কোনো ব্যক্তি-
(ক) মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাহার উপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, এবং
(খ) সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন,
তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
এদিকে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না।