বৃহত্তর কুষ্টিয়ার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার প্রান কেন্দ্র কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল। ১৯৬২ সালে কুষ্টিয়া শহরের প্রাণ কেন্দ্রে স্থাপিত হয়। ১০০ শয্যা নিয়ে চালু হয় ১৯৬৩ সালে। ২০০০ সালে ১৫০ শয্যায় এবং ২০০৭ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়।
কুষ্টিয়া সহ মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদাহ এবং রাজবাড়ীর প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে সাধারণ মানুষ সেবা নিতে আসে। প্রতিদিন প্রায় গড়ে দুই হাজার মানুষ সেবা নিয়ে থাকে এই হাসপাতালে। এই হাসপাতালের সেবার মানের বেশ সুনাম রয়েছে।
কিন্তু রোগীদের নানা অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার সুমনা রাইসার বিরুদ্ধে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় কুষ্টিয়া শহরের পিয়ারাতলা এলাকা থেকে রবিউল ইসলাম তার মেয়ে শিশু মাইশা (৫) কে নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য যায়। ওই সময় কর্তব্যরত ডাক্তার ছিলেন সুমনা রাইসা। তার কাছে রোগীর চিকিৎসার জন্য বললে ডাক্তার সুমনা রাইসা রোগী কে দেখে বলেন আমি শিশু বিষয়ক ডাক্তার না। আমি চিকিৎসা দিতে পারব না। আপনি কুষ্টিয়া সনো হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান বলে জানান ওই শিশুর বাবা। রোগীর বাবা রবিউল ইসলাম ডাক্তার কে বলে আমরা সরকারী হাসপাতালে এসেছি চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য আপনি সরকারী ডাক্তার হয়ে আমাদের বেসরকারী হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন কেনো? এই কথা শুনে ডাক্তার ক্ষিপ্ত হয়ে আমার সাথে খুবই বাজে আচরণ করে বলেও জানান ওই শিশুর বাবা।
সরজমিনে যেয়ে দেখা যায়, চিকিৎসক সুমনা রাইসা জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ছিলেন। কুষ্টিয়া আলচারা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী বলেন, আমরা ডাক্তারের এমন ব্যবহার আশা করি না। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য আসি কিন্তু ডাক্তারের এমন দূর্ব্যবহার আমরা কাম্য করিনা। এছাড়াও সেখানে উপস্থিত রোগীর স্বজনেরা জানান, জরুরী বিভাগের ডাক্তারের ব্যবহারটা আমাদের জন্য সন্তোষজনক না।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবু হাসানুজ্জামান এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, একজন সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার কখনই রোগী না দেখে বেসরকারী হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দিতে পারেন না। এ অভিযোগটির ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্প্রতি কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রসব বেদনায় গত ৮ই আগষ্ট বুধবার ভর্তি হয়েছিলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কবুরহাট গ্রামের মনির হোসেনের স্ত্রী খুশি খাতুন। ভর্তির চার দিনের মাথায় শনিবার (১১ আগষ্ট) সকালে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় তার গর্ভের সন্তান আর জীবিত নেই। মৃত সন্তানকে অপসারণ করতে হবে। বাধ্য হয়ে খুশি খাতুনকে ভর্তি করা হয় কুষ্টিয়া সদর উপজেলা মোড়স্থ একটি বেসরকারী হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে জানতে পারে খুশি খাতুনের গর্ভে মৃত নয়, তার সন্তান জীবিত রয়েছে। সিজার করে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম নেন। আর এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খুশি খাতুন ও তাদের পরিবার। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা চান সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
প্রসূতি খুঁশি খাতুন জানান, বুধবার আমাকে কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যা (জেনারেল হাপাতাল) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সনো রিপোর্টে দেখা যায় আমার গর্ভে সন্তান রয়েছে। চিকিৎসক তাদের সুবিধামত সময়ে ডেলিভারী করাবেন বলে জানান। কিন্তু তিনদিন পর শনিবার ভোর ৬টার দিকে জানানো হয় গর্ভে যে সন্তান রয়েছে তা জীবিত নয়, মৃত সন্তান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন কথায় আমি ভেঙে পড়ি। তখন একজন নার্স আমাকে ইনজেকশন পুশ করে। এতে আমি যন্ত্রনায় ছটফট করি। পরে আরেকটি ইনজেকশন পুশ করা হয় শরীরে। বুঝলাম মৃত সন্তান প্রসবের কারনেই নার্স শরীরে ইনজেকশন পুশ করছেন। পরে আমার স্বামী ও বাবা আমাকে নিয়ে যান বেসরকারী ইসলামিয়া হাসপাতালে। সেখানে আমার শরীরের অবস্থা নিশ্চিত হবার জন্য সনো করানো হয়। সনো রিপোর্টে জানানো হয় তার গর্ভে যে সন্তানটি রয়েছে তা জীবিত রয়েছে। দ্রুত আমাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিজার করান। এতে আমার গর্ভে পূত্র সন্তান জন্ম নেয়। সন্তানটির মাথা লম্বাকৃতির। তাছাড়া শরীরের অবস্থাও খুব একটা ভালো নেই। দ্রুত সন্তানের চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় সেই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। রাখা হয় নিবীড় পর্যবেক্ষণে।
এ বিষয়ে ইসলামিয়া হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু সাঈদ জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন কর্মকান্ডের কারনেই মা ও শিশুর জীবন বিপন্ন হতে চলেছে। এমন আচরণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কখনো কাম্য নয়।
খুঁশি খাতুন ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দু’টি জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের বিচার চান তারা।
তবে এবিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আরএমও তাপস কুমার সরকার তাদের দায় অস্বীকার করে জানান, খুঁশি নামে এক প্রসুতি নারী হাসপাতালে ভর্তি হলেও মৃত সন্তান হয়েছে মর্মে হাসপাতালের কেউ নিশ্চিত করেনি। আর এমন ঘটনা সঠিক নয়। যদি হাসপাতালের কোন স্টাফ জড়িত থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।