ভালো ডাক্তার হলে হবে না, ভাল মানুষ হতে হবে
মাহাবুবউল আলম হানিফ এমপি
আনন্দঘন পরিবেশে জাঁকজমকভাবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। বৃহষ্পতিবার সকালে মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফ।
প্রধান অতিথি এমপি হানিফ সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরে মেডিকেল কলেজের হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির আসন গ্রহন ও বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হানিফ বলেন, শুধু পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনই নয় বরং নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয়ের এ সমাজে ডাক্তারদের আরো মানবিক গুনাবলীর অধিকারী হতে হবে। মানবিক গুনাবলীর মাধ্যমে মানব সেবা ও মানুষে মানুষে ভালবাসার বন্ধন স্থাপন করতে হবে। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুত খাত ও প্রবৃদ্ধিসহ সব ক্ষেত্রে প্রভুত উন্নতি হয়েছে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এখন দৃশ্যমান। দেশ এগুলেও মানুষের নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে। যেন-তেনভাবে অর্থ উপার্জনে মানুষ ঝুঁকছে।
তিনি বলেন, একজন ছাত্র ডাক্তার হওয়ার উদ্দেশ্যে মনোযোগ সহকারে পড়েন। ভবিষ্যতে সে ভালো ছাত্র হলে ডাক্তার হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে একজন ভালো ডাক্তার হলে হবে না একজন ভাল মানুষ হতে হবে।
বুয়েটের মেধাবী ছাত্র কুষ্টিয়ার আবরার ফাহাদ হত্যা প্রসঙ্গে হানিফ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পৈশাচিক ও নারকীয় এ হত্যাকান্ড কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আবরারের সহপাঠি খুনীরা খুব ঠান্ডা মাথায় নির্মমভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে। দ্রুততম সময়ে জঘণ্য এ হত্যাকান্ডের বিচার হবে। বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় প্রমাণ করে দেশে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ নেই- বিএনপি নেতাদেরএমন মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বুয়েটছাত্র আবরার হত্যার বিষয়টা নিজেই মনিটরিং করছেন। তিনি আবরারের মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। আশ্বস্ত করেছেন যে, এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে। বিএনপি আবরার হত্যা নিয়ে একটা ইস্যু বানাতে চায়। এ হত্যা নিয়ে বিএনপির নোংরা রাজনীতি পরিহার করা উচিত।’
মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি বলেন, ‘বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক আসামিকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই এ হত্যার সঙ্গে জড়িত সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। রিমান্ডসহ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে। এ মামলার অভিযোগপত্র নভেম্বরের প্রথমদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেবে বলেও আমরা আশা করি। মামলাটা দ্রুতগতিতেই চলছে। এ ঘটনার যাতে সুষ্ঠু বিচার হয় সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।’
হানিফ আরো বলেন, ভিন্নমত থাকলেই কাউকে হত্যা করা যাবে না। গনতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সবাই মিলেমিশে থাকা। শিক্ষা গ্রহনের পাশাপাশি মেধা-যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়ে নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক গুনাবলী অর্জনের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি দ্রততম সময়ের মধ্যে অস্থায়ী ক্যাম্পাস থেকে মুল ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রকল্প পরিচালক ও গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন।
অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া-১ আসনের এমপি আ,কা,ম, সরওয়ার জাহান বাদশা, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এসএম মুস্তানজিদ, জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন, সিভিল সার্জন ডাক্তার রওশন আরা বেগম, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলামসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শেষে প্রধান অতিথি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেক কাটেন। পরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ৯ অক্টোবর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পথচলা শুরু হয়।