নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হওয়ার পর কুষ্টিয়ায় বিআরটিএ অফিসের কাজ আগের তুলনায় তিনগুন বেড়ে গেছে। হঠাৎ করে এত মানুষের চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে মটর সাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির কাগজপত্র নবায়ন ও রেজিষ্ট্রেশনের কাজের জন্য ভীড় করছেন সেবা প্রত্যাশীরা।গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বুথেই লোকজনের উপচেপড়া ভীড়। যে যার মত কাজ সারতে লাইন দিয়েছেন। নতুন যারা এসেছে তার অফিসের স্টাফদের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছেন।
কথা হলে আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘রাস্তায় গাড়ি তল্লাশী হচ্ছে। আগে কাগজপত্র করা হয়নি। আর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সবার ভিতরই একটা পরিবর্তন এসেছে। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে এসেছি। অফিসে খুব ভীড়।কুমারখালী থেকে আসা রাসেল আহমেদ বলেন, আন্দোলন হওয়ায় ভাল হয়েছে। সবার মধ্যে পরিবর্তন কাজ করছে। মানসিকতাও পরিবর্তন হয়েছে। তাই গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন ফি জমা দিতে এসেছি। গাড়ি থাকলে সব কাগজও থাকা প্রয়োজন।
বিআরটিএ অফিস সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর পরই অফিসে চাপ বেড়ে গেছে। গত এ সপ্তাহে ব্যাপক চাপ বেড়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে সামাল দেয়া যাচ্ছে না।
বিশেষ করে পুলিশের লোকজন বেশি আসছেন। এছাড়া বড়বড় রাজনীতিবিদরাও আসছেন কাগজপত্র করার জন্য। আগে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি শিক্ষানবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন পড়লেও এখন তা ১০০ থেকে ১৫০টি পর্যন্ত হচ্ছে। এছাড়া ফিটনেস, রেজিষ্ট্রেশনসহ অন্যান্য কাজও দুই থেকে তিনগুন বেড়ে গেছে।
ট্রাফিক অফিস সূত্র জানিয়েছে, তাদের ৬টি টিম গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশী করছেন। গত ৪ দিনে মামলা হয়েছে প্রায় ১ হাজারের বেশি। রাস্তায় গাড়ি তল্লাশীর কারনেই বিআরটিএ অফিসে ছুটছেন লোকজন।
অফিস ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগই এসেছেন মটর সাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে। তারা সবাই টাকা জমা দিয়ে তাৎক্ষনিক লার্নার নিচ্ছে। এছাড়া রেজিষ্ট্রেশন, নবায়নসহ অন্যান্য কাজও করছেন লোকজন।
অফিসের স্টাফ মুরাদ হোসেন বলেন, ‘কাজের চাপ আগের থেকে কয়েকগুন বেড়ে গেছে। সকাল থেকে কয়েক ঘন্টায় অন্তত কয়েক’শ নতুন আবেদন পড়েছে। বেশির ভাগই নিতে আসছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স। এছাড়া যাদের রেজিষ্ট্রেশন নেই তারাও কাগজ করতে আসছেন। গত এক সপ্তাহে কুষ্টিয়া অফিস থেকে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায় হয়েছে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে আসা এক যুবলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘ আগে যেনতেন করে চলা যেত। এখন দলীয় পরিচয় দিয়েও কাজ হচ্ছে না। তাই কাগজপত্র করে রাখছি। যাতে কোন ঝামেলা না হয়।
অফিসে অবস্থানকালীন দেখা গেছে, পুলিশের অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন এসেছেন গাড়ির কাগজ করতে। কথা হলে এক পুলিশ সদস্য বলেন,‘ আইনের লোক হয়েও এতোদিন কাগজ ছিল না। তবে আন্দোলনের পর সবার মধ্যেই একটা পরিবর্তন কাজ করছে। তাই সবাই বৈধ কাগজপত্র করে নিচ্ছেন।
বিআরটিএ অফিসের পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন,‘ চাপ বাড়ায় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। খাওয়া দাওয়ার সময় পর্র্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চাপ থাকছে। আগামী কয়েক সপ্তাহ এ চাপ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন তিনি।
লোকজনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায় বেশি হচ্ছে আগের তুলনায়। সবচেয়ে বড় কথা আন্দোলনের কারনে সবার মধ্যে একটা ধাক্কা লেগেছে। এতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে।